আধুনিক পদ্ধতিতে দেশি ও বিদেশি কবুতর পালন পদ্ধতি কবুতর মুক্ত পদ্ধতি, আবদ্ধ পদ্ধতি ও অর্ধআবদ্ধ পদ্ধতিতে পালন করা যায় । মাটি থেকে কবুতর ঘরের উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং কবুতরের বাসা বা ঘর থেকে চালের উচ্চতা ৮ থেকে ১০ ফুট হওয়া উচিত । সুন্দর ভাবে কবুতর চাষ করার জন্য ৪০ থেকে ৫০ জোড়া কবুতর আদর্শ। কবুতরের বাসা দুটি বা তিন তলা করা ভাল , বেশি উচু করলে কবুতরের বিভিন্ন অসুবিধা হয়ে থাকে । ঘরগুলি কাঠ, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় । মাটি থেকে কবুতর ঘরের উচ্চতা ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং কবুতরের বাসা বা ঘর থেকে চালের উচ্চতা ৮ থেকে ১০ ফুট হওয়া উচিত । সুন্দর ভাবে কবুতর চাষ করার জন্য ৪০ থেকে ৫০ জোড়া কবুতর আদর্শ । কবুতরের বাসা দুটি বা তিন তলা করা ভাল , বেশি উচু করলে কবুতরের বিভিন্ন অসুবিধা হয়ে থাকে । ঘরগুলি কাঠ, বাঁশ, খড় ইত্যাদি দিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় ।
কবুতর পালন ও চিকিৎসা: প্রাথমিক তথ্য
আমাদের দেশে বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর সর্বাধিক জনপ্রিয় । কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর পালন করা হয়- এর বাহ্যিক সৌন্দর্য্যগত দিকগুলোর কারণে । প্রাচীনকালে কবুতর পালন করা হতো চিঠি আদান প্রদানের কাজে । শোনা যায় প্রাচীনকালে রাজা বাদশাহ তাঁদের বিভিন্ন ধরনের বার্তা প্রেবণের জন্য বেছে নিতেন কবুতরকে । এছাড়া, সারা পৃথিবী জুড়ে কবুতরকে ধরা হয় শান্তির দূত হিসেবে । এই কারণে, বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে কবুতরকে খাঁচামুক্ত করে উদ্বোধন করা হয় ।
সবচেয়ে বড় কথা, কবুতর পালন করার জন্য অতিরিক্ত বা বাহুল্য কোন খরচ হয় না । কবুতরকে সহজেই পোষ মানানো যায় । বাড়ির যেকোন কোণ বা আঙিনা অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা কার্নিশের মত ছোট বা অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন করা যায় । এমনকি ছাদের সাথে ঝুড়ি ঝুলিয়ে ও কবুতর পালন করা যায় । এই কারণে, শহরে কী গ্রামে অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা যায় ।
কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক বিশেষজ্ঞরা বলেন, কবুতরের মাংসে সাধারণ অন্যান্য পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের পরিমান বেশি । ফলে আমিষের পাশাপাশি প্রটিনের বাড়তি চাহিদা পূবণের জন্য ও কবুতরের মাংস খাওয়া হয়ে থাকে । বানিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে অনেকেই অল্প সময়ে এটাকে লাভ জনক ব্যবসা হিসেবে দাঁড়া করাতে পেরেছেন । কবুতর সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস করে । প্রতি জোড়ায় একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী কবুতর থাকে । এরা ১২ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে । যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা প্রজনন করে থাকে । ডিম পাড়ার পর স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরই পর্যায়ক্রমে উক্ত ডিমে তা দিয়ে থাকে । কবুতরের কোন জোড়া হঠাৎ ভেঙে গেলে সেই জোড়া তৈরি করতে কিছুটা বেগ পেতে হয় । নতুন জোড়া তৈরি করার জন্য স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকে একঘরে কিছুদিন রাখতে হয় ।
কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমুহ:
কবুতর পালন করলে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি । পরবর্তীতে কবুতর পালনের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো ।
(১) সাধারনত একটি ভাল জতের কবুতর বছরে ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম হয়ে থাকে । এই ডিম গুলোর প্রায় প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া যায় । এই বাচ্চা পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী হয় ।
(২) গৃহপালিত অন্যান্য পাখির মধ্যে কবুতরকে পোষ মানানো বা লালন করা যায় ।
(৩) খুবই অল্প জায়গায় কবুতর লালন পালন করা যায় । এমনকি ঝোলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা সম্ভব । লালন পালনে কম জায়গা লাগে বলে কবুতর পোষায় খরচের পরিমাণ একেবারেই কম ।
(৪) বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর নিজের খাবার নিজেই খুঁজে নিয়ে থাকে । এই কারণে কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি যত্ন বা খরচ খুব একটা হয় না বললেই চলে ।
(৫) কবুতরের থাকার জায়গার জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয় না । বাড়ির আঙিনা, বা ছাদের ওপর কাঠের ঘর তৈরি করে অনায়াসেই কবুতর পালন করা যায় । প্রমাণ সাইজের ঝুড়িতে করে ও কবুতর পালন করা যায় ।
(৬) একটি পূণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম দেবার উপযোগী হতে ৫ থেকে ৬ মাস মসয় লাগে । এই অল্প সময় অতিক্রান্ত হবার পর থেকেই কবুতর বছরে প্রায় ১২ জোড়া ডিম প্রদানে সক্ষম । ২৬ থেকে ২৮ দিন বয়সেই কবুতরের বাচ্চা খাবার উপযোগী হয়ে থাকে বা এই বাচ্চাকে বাজারজাত করা যায় । সাধারণত কবুতরের বাচ্চা রুগীর পথ্য হিসেবেও অনেকে বেছে নেন ।
(৭) কবুতরের ডিম থেকে মাত্র ১৮ দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে ফুটে থাকে । এই বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫ থেকে ৬ মাস পরে নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু করে । ফলে কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের সংখ্যা ।
(৮) কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা রয়েছে । কারণ, কবুতরের মাংস খুবই সুস্বাদু ও বলকারক । তাছাড়া, বাজারের অন্যান্য মাংসের যোগান থেকে কবুতর কিছুটা সস্তাতে ও পাওয়া যায় ।
একটি খুব ভালো প্রজাতির কবুতর লালন করলে পরবর্তী ১ বছরের মধ্যে সেই জোড়া থেকে কয়েক জোড়া কবুতর পাওয়া খুব বেশি আর্শ্চযজনক বিষয় নয় । এই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে ধরা যেতে পারে । কারণ, কবুতর লালন-পালনের খরচ খুব একটা নেই । এমনকি কবুতরের রোগ ব্যাধি কম হয় । কবুতরের থাকার জায়গা নির্বাচনে ও অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না । এই কারণে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যই লাভজনক ।
ধারাবাহিক ভাবে কবুতর তার বংশবৃদ্ধি করে বলে অনেকেই আজকাল কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন । মুরগির মাংসের বিকল্প হিসেবে কিংবা অতিথি পাখির বিকল্প হিসেবে অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে থাকেন ।
কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা: বিস্তারিত তথ্য
ইতিহাস থেকে জানা যায় বহু আদিকাল থেকে মানুষ কবুতর পালন করে আসছে । সে সময় মানুষ দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো । এছাড়াও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত বিনোদন ও সুস্বাদু মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল । বর্তমানে আমাদের দেশেও প্রধানত মাংস ও চিত্ত বিনোদনের জন্য কবুতর পালন করা হয়ে থাকে ।
কবুতর প্রতিপালনের প্রয়োজনীয়তা:
কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে । কবুতর বাড়ি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায় । কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক হিসেবে সদ্যরোগমুক্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপযোগী । রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে । আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালন করছেন ।
কবুতর প্রতিপালনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
বাংলাদেশে সাধারণত কবুতরকে মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয় । কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু, বলকারক ও রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা সাধারণ মানুষের নিকট অতি প্রিয় ।
১। ন্যুনতম ব্যয়ে প্রতিপালন:
হাঁস-মুরগীর তুলনায় কবুতর পালন মোটেও ব্যয়বহুল নয় । স্বল্প পুঁজি, অল্প খরচ ও সীমিত স্থানে অতি সহজে কবুতর পালন করা যায় ।
২। কবুতরের ঘর নির্মাণে ন্যুনতম ব্যয়:
গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে পারিবারিকভাবে কবুতর প্রতিপালন করা যায় । বাড়ির চালের বাড়তি অংশে কাঠ বা বাঁশের ঘর বা খোপের মতো করে দিলে এখানে আপনা-আপনি কবুতর এসে বাসা বাঁধে এবং বংশবৃদ্ধি করে । এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে । এভাবে কবুতর প্রতিপালন করে অনেক পরিবার যেমন তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে তেমনি অন্যভাবে নিয়মিত কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে । বাণিজ্যিকভাবে কবুতর প্রতিপালনেও সীমিত ব্যয় হয় । এদের ঘরের অধিকাংশই কাঠ ও বাঁশের তৈরি হয়ে থাকে । সর্বোপরি এজন্য খুব কম জায়গার প্রয়োজন হয় ।
৩। ডিম ফোটার হার:
কবুতরের ক্ষেত্রে ডিম ফোটার হার ৯৮%, যা মুরগির ক্ষেত্রে প্রায়শ ৮০-৮৫% হয়ে থাকে । এদের ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর বা এজাতীয় কোনো ব্যয়বহুল যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না ।
জেনারেশন বিরতি:
স্বল্প বয়সে এদের পুনরুৎপাদন শুরু হয় । তাই একজন উৎপাদনকারী অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হতে পারে । একটি কবুতর সাধারণত বছরে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা দেয় । ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৬-১৮ দিন সময় লাগে ।
কবুতরের জাত:
বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতর রয়েছে । আমাদের দেশে ২০ টিও অধিক জাতের কবুতর আছে বলে জানা যায় । নিম্নে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১। গোলা:
এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ । আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে । ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনা-আপনি এখানে এসে বসবাস করে । এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের । এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয় ।
২। গোলী:
গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির । এ জাতের কবুতর পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় ছিল । এদের লেজের নীচে পাখার পালক থাকে । ঠোঁট ছোট হয় এবং পায়ে লোম থাকে না । এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত ।
৩। টাম্বলার:
এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজী খায় বলে এদের টাম্বলার বলে । আমাদের দশে এই জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত । এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ । মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে ।
৪। লোটান / গিরিবাজ:
লোটন কবুতরকে রোলিং (rolling) কবুতরও বলা হয় । গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজী খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজী খায় । সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে । এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত ।
৫। লাহোরী / শিরাজী:
আমাদের দেশে এই কবুতরটি শিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত । এদের উৎপত্তিস্থল লাহোর । এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙ্গীন হয় । সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায় ।
৬। কিং:
কিং জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব (ঝয়ঁধন বাচ্চা) উৎপাদনে ব্যবহার হয় । এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং । এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় ।
৭। ফ্যানটেল:
এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর । ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে । এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয় । এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে । এদের লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে । পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে । এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় এবং দেশ বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় ।
৮। জ্যাকোবিন:
এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায় । এদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না । তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারত বলেই ধারণা করা হয় । এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের হয় । এদের দেহ বেশ লম্বাটে । চোখ মুক্তার মত সাদা হয় ।
৯। মুকি:
এ জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মত পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে । মুকি জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয় । এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না । এ জাতের কবুতরের মাথা সাদা, বুক খুব একটা চওড়া নয় তবে উঁচু ও বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে । সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে না ।
কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুঁটানো:
হাঁস-মুরগির মতো যে কোনো মর্দা কবুতর মাদী কবুতরের সাথে হজে জোড়া বাঁধে না । এদেরকে এক সাথে এক সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাঁধে । মুরগীর ন্যায় কবুতরের জননতন্ত্রে ডিম উৎপন্ন হয় । তবে ডিম্বাশয়ে একসাথে সাধারণত মাত্র দু'টি ফলিকুল তৈরি হয় ।
এ কারণে প্রতিটি মাদী কবুতর দু'টি ডিম পাড়ে । ডিম পাড়ার ৪০-৪৪ ঘন্টা পূর্বে ডিম্ব স্খলন হয় এবং ডিম পাড়ার কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে তা নিষিক্ত হয় । অর্থাৎ যে ১৬-২০ ঘন্টা পর্যন্ত ডিম ডিম্বনালীতে থাকে সে সময়ে তা নিষিক্ত হয়ে থাকে ।
ডিম পাড়ার পর থেকে মর্দা ও মাদী উভয় কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে । মাদী কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেয় এবং বাকী সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মর্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে । তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনুর্বর ডিম চেনা যায় । বাতির সামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালী দেখা যায় । কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে । সাধারণত ডিম পাড়ার ১৭-১৮ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় । এভাবে একটি মাদী কবুতর সাধারণত ১২ মাসে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে । জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে । প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে ।
এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায় । প্রায় ৪-৫ দিন পর বাচ্চার চোখ খোলে বা ফুটে । পনের দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায় । প্রায় ১৯-২০ দিনে দু'টো ডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁট স্বাভাবিক হয় । এই ভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে । কবুতর সাধারণত ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে ।
পিজিয়ন মিল্ক:
কবুতরের খাদ্যথলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয় । এই খাদ্য থলিতে দু'টি অংশ বা লোব (ষড়নব) থাকে । ডিমে তা দিতে বসার প্রায় অষ্টমদিন থেকে "পিজিয়ন মিল্ক" উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয় । এন্টিরিত্তর পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাকটিন (Prolactin) হরমোনের প্রভাবে এই ' পিজিয়ন মিল্ক' উৎপন্ন হয় । এ কারণে কবুতর ছানার জন্য কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না । কারণ প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত ছানা তার মাতা-পিতার কাছ থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত খাবার পেয়ে থাকে । এটিকে পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ বলা হয় । পিজিয়ন মিল্ক হলো পৌষ্টিক স্তরের কোষের মধ্যে চর্বির গুটিকা (globules of fat) যা পিতা মাতা উভয়ের খাদ্য থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ হয় । পিজিয়ন মিল্ক কবুতর ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার । এতে ৭০% পানি, ১৭.৫% আমিষ, ১০% চর্বি এবং ২.৫% বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে । মাতাপিতা উভয় কবুতরের খাদ্য থলির অভ্যন্তরীণ আবরণ থেকে পিজিয়ন মিল্ক উৎপন্ন হয় । কবুতরের জিহ্বা লম্বা ও সরু । মুখ গহ্বরের নীচের অংশ বেশ প্রশস্ত হয় যা ছানাকে খাওয়ানোর উপযোগী । মাতা ও পিতা কবুতর ছানার মুখের মধ্যে মুখ প্রবেশ করিয়ে খাবার সরাসরি অন্ননালীতে পৌছে দেয় ।
কবুতরের ঘর:
আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামে টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্ণিশে মাটির হাড়ি অথবা টিন বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে । এ ছাড়া কাঠের তৈরি ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতর পালা হয়ে থাকে । মজার ব্যাপার হলে, কয়েক জোড়া কবুতরের ঘর করে এক জোড়া কবুতর পালন করলে কয়েক দিনের মধ্যে বাকী ঘরগুলোতে নতুন জোড়া কবুতর এসে বাসা বাঁধে । কবুতর পোষা খুব সহজ এবং লাভজনক তা বলাই বাহুল্য । অল্প-পরিসরে যা বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের জন্য অবশ্যই সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয় । নিম্নে কবুতরের ঘর বা খোপ তৈরির বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করা হলো ।
স্থান নির্বাচন: কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন ।
ঘরের উচ্চতা: কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজী ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘর নাগালে না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর উঁচু করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে কাঠ বা বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে ।
ঘরের পরিসর: প্রতি এক জোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন । এক জোড়া কবুতর যাতে ঘরের ভিতর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখে ঘর নির্মাণ করতে হবে ।
স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থা: কবুতরের ঘর বা খোপ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন সেখানে পোকা-মাকড়, কৃমি, জীবাণু ইত্যাদির উপদ্রব কম থাকে এবং ঘর সহজেই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা যায় ।
সূর্যালোক: ঘরে যাতে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে । কারণ সূর্যের আলো যেমন পাখির দেহে ভিটামিন-ডি সৃষ্টিতে সাহায্যে করে তেমনি পরিবেশও জীবাণুমুক্ত রাখে ।
বায়ু চলাচল: কবুতরের ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে । কারণ দূষিত বাতাস বা পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে পাখির স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে ।
কবুতরের খাদ্য:
হাঁস-মুরগির ন্যায় কবুতরের খাদ্যে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, খনিজ ও ভিটামিন প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন । কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে থাকে । প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে । কবুতর প্রধানত গম, মটর, খেশারী, ভুট্টা, সরিষা, যব, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে । মুক্ত অবস্থায় পালিত কবুতরের জন্য সকাল-বিকাল মাথা পিছু আধ মুঠ শস্যদানা নির্দিষ্ট পাত্রে
খাদ্য উপাদান |
পরিমাণ (%) |
ভুট্টা |
৩৫ |
মটর |
২০ |
গম |
৩০ |
ঝিনুকের গুঁড়া/চুনাপাথর চূর্ণ/অস্থিচূর্ণ |
০৭ |
ভিটামিন/এমাইনো এসিড প্রিমিক্স |
০৭ |
লবণ |
০১ |
মোট |
১০০ |
রেখে দিলে প্রয়োজন মত তারা খেতে পারবে । বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিম্নে প্রদত্ত খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম ।
কবুতরের খাদ্য তালিকা:
এই সাথে কবুতরের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে । এক পাত্রে কবুতরের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও অন্য পাত্রে প্রয়োজন মত পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি রাখতে হবে ।
কবুতরের শারীরবৃত্তিক তথ্যাদি
* দেহের তাপমাত্রা = ৩৮.৮-৪০০ সে
* দৈহিক ওজন
(ক) হালকা জাতঃ ৪০০-৪৫০ গ্রাম
(খ) ভারী জাতঃ ৪৫০-৫০০ গ্রাম
* পানি পান
(ক) শীতকালঃ ৩০-৬০ মিলি প্রতিদিন
(খ) গ্রীষ্মকালঃ ৬০-১০০ মিলি প্রতিদিন
* খাদ্য গ্রহণ = ৩০-৬০ গ্রাম প্রতিদিন (গড়)
* ডিম ফুটানোর সময়কাল = ১৭-১৮ দিন।
কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:
রোগের নাম |
কারণ |
লক্ষণ |
চিকিৎসা |
প্রতিরোধ |
সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস |
সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম |
শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়। দেহ ক্রমাগত শুকিয়ে যায়। ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত পরিলক্ষিত হয়। |
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে । |
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
পাসটিউরেলা মালটোসিডা |
পাসটিউরেলা মালটোসিডা |
ডাইরিয়া, জ্বর (৮২-৮৩০ ঈ) কোন লক্ষণ ব্যতীত ২৪-৪৮ ঘন্টা মধ্যে কবুতর মারা যায় |
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে । |
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
করাইজা অথবা আউল'স হেড |
হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা |
সর্দি, চোখের পাতাদ্বয় ফুলে প্যাঁচার মাথার ন্যায় দেখায়, অক্ষিঝিলি্ল প্রদাহের ফলে চোখ দিয়ে (muco-purulent) পদার্থ নির্গত হয়। |
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে। |
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
মাইকোপ্লাজমোসিস |
মাইকোপ্লাজমা কলাম্বিনাম |
সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে প্রথমে পানি এবং পরে muco-purulent পদার্থ নির্গত হয়। মুখ ও কন্ঠ অত্যধিক প্রদাহে স্ফীত থাকে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। |
টিয়ামুলিন, টাইলোসিন এনরোফ্লুক্সসিন, স্পাইরামাইসিন, লিনকোমাইসিন গ্রুপের ঔষধ |
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস |
ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি |
চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে, স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং রোগ ভোগের পর মরা যায় |
ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন, টাইলোসিন, লিনকোমাইসিন, স্পাইরামাইসিন ইত্যাদি |
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। ২। টিকা প্রদান করতে হবে। |
নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১ |
প্যারামিক্সো ভাইরাস টাইপ-১ |
সবুজ রংয়ের ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মুখ হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা, পাখা ও পায়ের পক্ষাঘাত ইত্যাদি। |
এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন, ইমিউনো স্টিমুলেটর |
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। * টিকা প্রদান করতে হবে। |
ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ) |
বোরেলিয়া কলাম্বরী ভাইরাস |
পালকহীন ত্বক বিশেষ করে চোখ, ঠোঁটের চারপাশে এবং পায়ে ক্ষত বা পক্স দেখা যায় |
এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ এবং সি, ইমিউনো স্টিমুলেটর, টপিক্যাল আইওডিন |
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। |
পরজীবী রোগ |
আইমেরিয়া, এসকারিস, ক্যাপিলারিয়া, ট্রাইকোমোনা |
দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শুকিয়ে যাওয়া, ডাইরিয়া (মলে রক্ত থাকে ককসিডিয়া), পুষ্টিহীনতা ও অবশেষে মৃত্যু ঘটে। |
কৃমিনাশক, ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স, এমাইনো এসিড |
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। |
অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগসমূহ:
ভিটামিন এ এর ঘাটতি |
দেহে ক্ষত হয়, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং অক্ষিঝিলি্লর প্রদাহ দেখা দেয়, ক্ষুধা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধি ও পালকের গঠণ ব্যাহত হয়, উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায় |
২০০ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন |
নিয়মিত ভিটামিন, প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে । |
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি |
অস্থি নরম ও বাঁকা হয়ে যায়, ডিম উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়, ডিমের খোলস পাতলা হয়। |
৪৫ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন |
ভিটামিন ডি ও মিনারেল প্রিমিক্স প্রদান, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (কডলিভার অয়েল, ফিস মিল) প্রদান করতে হবে। |
ভিটামিন ই |
এনসেফালোম্যালাশিয়া রোগ হয়, পক্ষাঘাতের ফলে চলতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বুক ও পেটের নীচে তরল পদার্থ জমে, ইডিমা হয়। ডিমের উর্বরতা কমে যায়। |
১ মিগ্রা |
সেলিনিয়াম সহ ভিটামিন ই প্রদান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (শস্য দানা, গম, চাউলে কুড়া, শুটকি মাছ) খাওয়াতে হবে । |
ভিটামিন কে |
রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। |
------- |
ভিটামিন কে প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (সবুজ শাকসবজি ও মাছের গুঁড়া)। |
ভিটামিন বি১ |
পা, ডানা ও ঘাড়ে পক্ষাঘাত হয়। ঘাড়ের পক্ষাঘাতের ফলে ঘাড় পেছন দিকে করে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে, চলনে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। |
০.১ মিগ্রা |
ভিটামিন বি১ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান (চাউলের কুড়া, গমের গুঁড়া, শাক সবজি) |
ভিটামিন বি২ |
ছানার পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। পরে নখ বা আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। ছানার দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। |
০.১২ মিগ্রা |
ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (সবুজ শাক সবজি, ছোলা, খৈল, আলফা-আলফা, ঈষ্ট) |
ভিটামিন বি৬ |
ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্যারালাইসিস ও পেরোসিস হতে পারে । |
০.১২ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (শস্য, মাছের গুঁড়া, আলফা-আলফা, ঈষ্ট ইত্যাদি) |
ভিটামিন বি১২ |
বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায় । |
০.২৪ মিগ্রা |
ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, মাংস ফিসমিল ইত্যাদি) |
ফলিক এসিড |
রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও পালক কম গজায় । |
০.০১৪ মিগ্রা |
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও সাথে ম্যানগানিজ (সহ) প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, ঈষ্ট) |
ম্যানটোথেনিক এসিড |
বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চর্ম রোগ হয়। পা ও চোখের চারিপাশে নেক্রোসিস হয়। ডিমের উর্বরতা হ্রাস। |
০.৩৬ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক এসিড সমৃদ্ধ ভিটামিন প্রদান (চীনাবাদাম, আখের গুড়, ঈষ্ট, চাউলের কুড়া, গমের ভূষি ইত্যাদি) |
বায়োটিন |
পেরোসিস, ডিমের উর্বরতা হ্রাস ও চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়। |
০.০০২ মিগ্রা |
বায়োটিন সমৃদ্ধ ভিটামিন ও খাদ্য প্রদান। |
খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন, ম্যানগানিজ, কপার এন্ড কোবাল্ট, আয়রন) |
হাড় গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ডিমের খোসা নরম হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেরোসিস ও প্যারালাইসিস হয়। |
------------ |
পাখিকে নিয়মিত ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও খাদ্য প্রদান করতে হবে । |
এমাইনো এসিড:
আমিষ বিভিন্ন প্রকার এমাইনো এসিড সরবরাহ করে যা দেহ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক । যে সব এমাইনো এসিড পাখির দেহে সংশ্লেষণ হয় না তাকে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বলে । সুতরাং পাখিকে এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য (শুটকি মাছের গুড়া, সরিষা, তিল ও চীনাবাদামের খৈল) সরবরাহ করতে হবে ।
অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের নাম |
প্রতিদিনের প্রয়োজন |
মথিওনিন |
০.০৯ গ্রাম |
লাইসিন |
০.১৮ গ্রাম |
ভ্যালিন |
০.০৬ গ্রাম |
লউসি |
০.০৯ গ্রাম |
আইসো-লিউসিন |
০.০৫৫ গ্রাম |
ফিনাইল অ্যালানিন |
০.০৯ গ্রাম |
ট্রিপটোফেন |
০.০২ গ্রাম |
আয় ও লাভ:
এক জোড়া কবুতর থেকে বছরে প্রায় ১২ জোড়া বাচ্চা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয় । এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির সৌখিন কবুতর উৎপাদন করতে পারলে তা থেকে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করা যায় । কবুতর সাধারণত ৪ সপ্তাহ বয়সে বিক্রির উপযুক্ত হয় । এদের পালক ও বিষ্ঠা বিক্রি করেও অর্থ রোজগার করা যায় ।
পরিশেষে, কবুতরের সাধারণত মুরগির থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি । এক জোড়া কবুতরের গড় উৎপাদন ক্ষমতা ৫-১২ বছর অথচ সেখানে মুরগির মাত্রা ১-১২ বছর হয়ে থাকে ।
এ সমস্ত দিক বিবেচনা করে এটা সহজেই বলা যায় যে কবুতর পালন একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা । মুরগির ন্যায় যদি কবুতরকে পারিবারিকভিত্তিতে ব্যাপকভাবে পালন করা যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অনেক বেশি সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা যায় । অবশ্য এই উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন রয়েছে । এজন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া বিশেষ প্রয়োজন ।