বঙ্গভাষা কবিতার ব্যাখ্যা । বঙ্গভাষা কবিতার প্রতি লাইনের ব্যাখ্যা
বঙ্গভাষা কবিতার প্রতি লাইনের ব্যাখ্যা:
হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
সরল অর্থ: হে বঙ্গভূমি, তোমার ভান্ডারে নানা রূপ রত্ন আছে ।
"তা সবে (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,"
সরল অর্থ: সে সবকে (অবোধ আমি) অবহেলা করে
"পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি ।"
সরল অর্থ: পরধনের লোভে মত্ত হয়ে কী কুক্ষণে ভিক্ষাবৃত্তি আচরণ করে পরদেশে ভ্রমণ করলাম ।
"কাটাইনু বহুদিন সুখ পরিহরি ।"
সরল অর্থ: কবি বহুদিন সুখ ত্যাগ করে কাটিয়ছেন ।
"অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায় মনঃ"
সরল অর্থ: অনিদ্রা অনাহারে দেহ-মন সঁপে দিয়ে,
"মজিনু বিফল তপে অবরেণ্য বরি;"
সরল অর্থ: অবরেণ্যকে বরণ করপ বিফল তপস্যায় মগ্ন হলাম ।
"কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল কানন!"
সরল অর্থ: পদ্মবনকে ভুলে শৈবালে কেলি করলাম ।
"স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে"
সরল অর্থ: কবিকে স্বপ্নে কুললক্ষ্মী পরে বলে দিলেন
"ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,"
সরল অর্থ: ওরে বাছা, মায়ের কোষাগারে কত রত্ন আছে,
"এ ভিখারি-দশা তবে কেন তোর আজি?"
সরল অর্থ: তবে তোর এই ভিখারি দশা কেন?
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!
সরল অর্থ: ওরে অজ্ঞান, যা তুই ঘরে ফিরে যা ।
"পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে"
সরল অর্থ: এই আদেশ আমি আনন্দের সঙ্গে পালন করলাম ।
"মাতৃ-ভাষা-রূপ-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে ।"
সরল অর্থ: কালক্রমে নানা মণিতে পূর্ণ মাতৃভাষা-রূপ খনির সন্ধান পেলাম ৷
বঙ্গভাষা কবিতার ব্যাখ্যা:
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজি ভাষার কবি হতে চেয়েছিলেন । কবি নিজেকে অবোধ বলেছেন, কারণ বাংলা ভাষার ভান্ডারে কত অমূল্য রত্ন আছে, কত সুন্দর এই ভাষা তবুও কবি একে অবহেলা করে পরের ধনে মত্ত হয়ে বিদেশে গিয়েছিলেন । পরের ধন লাভের এই চেষ্টাকে কবি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন । ইংরেজি ভাষার কবি হবার চেষ্টায় কবি অনেক দিন অনেক কষ্ট সহ্য করে কঠোর সাধনা করেন আর এই প্রচেষ্টাকে কবি বলেছেন অবরেণ্যকে বরন করার সমান অথবা পদ্মফুলে ভরা জলাশয়কে ত্যাগ করে শেওলার মধ্যে খেলা করার সমান । বঙ্গকুললক্ষ্মীর স্বপ্নাদেশে কবিকে বললেন, তাঁর মায়ের ভান্ডারে যখন এত সম্পদ থাকার পরও কেন তিনি ভিখারির মতো পরের ভাষার দুয়ারে ঘুরছেন? তিনি যেন দেশে ফিরে আসেন এবং তার নিজ মাতৃভাষায় কবিতা রচনা করেন আর এই আদেশ কবি আনন্দের সঙ্গে পালন করলেন ও মাতৃভাষার কাছে ফিরে এলেন এবং পূর্ণ মণিজালে মাতৃভাষারূপ খনিকে আবিষ্কার করলেন ।