বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন: কখন, কোথায়, কীভাবে যাবেন?
কাঞ্চনজঙ্ঘা কি
কাঞ্চনজঙ্ঘা
(Kangchenjunga) হলো পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ । এর উচ্চতা
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮,৫৮৬ মিটার (২৮,১৬৯ ফুট) । এই শৃঙ্গটি
নেপাল ও ভারতের সিকিম
রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত । “কাঞ্চনজঙ্ঘা” শব্দটির অর্থ হলো “বরফে ঢাকা পাঁচ ধনভাণ্ডার”, কারণ এর পাঁচটি প্রধান
চূড়া রয়েছে ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা কোথায় অবস্থিত
এটি মূলত হিমালয়ের
পূর্ব
অংশে,
অর্থ্যাৎ এটি নেপাল এবং
ভারতের সিকিম রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত । এর পাঁচটি
প্রধান
চূড়ার
মধ্যে
তিনটি
(মুখ্য,
কেন্দ্রীয় ও
দক্ষিণ)
নেপাল
এবং
ভারতের
উত্তর
সিকিম
জেলা
সীমান্তে অবস্থিত, আর
বাকি
দুটি
চূড়া
নেপালের তাপ্লেজুং জেলায়
অবস্থিত ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা কোন জেলায় অবস্থিত
বাংলাদেশের
পঞ্চগড় জেলা থেকে এটি
স্পষ্ট দেখা
যায় । বিশেষ
করে তেঁতুলিয়া
উপজেলা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার
জন্য দেশের
সবচেয়ে বিখ্যাত
স্থান ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা বাংলাদেশ থেকে দর্শন ও দূরত্ব
কাঞ্চনজঙ্ঘা যদিও
নেপাল
ও
ভারতে
অবস্থিত, তবুও
বছরের
একটি
নির্দিষ্ট সময়ে
বাংলাদেশের উত্তর
দিক
থেকে
এটি
দেখা
যায় ।
- পঞ্চগড়
থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দূরত্ব:
বাংলাদেশের সর্ব-উত্তরের জেলা পঞ্চগড়-এর তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের সবচেয়ে ভালো দৃশ্য দেখা যায়। তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব প্রায় ১০-১১ কিলোমিটার (বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব ১১ কিমি)।
- বাংলাদেশের
বিভিন্ন বিভাগের দূরত্ব: কাঞ্চনজঙ্ঘার
অবস্থান ভারত ও
নেপালের সীমান্তে হওয়ায় এর সঠিক দূরত্ব বাংলাদেশের কোনো বিভাগীয় শহর থেকে পরিমাপ করা সম্ভব না। সাধারণত দূরত্ব মাপা হয় বাংলাদেশের যে জায়গা থেকে এটি দেখা যায়, অর্থাৎ পঞ্চগড় থেকে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব প্রায় ৪৪০-৪৫০ কিলোমিটার। অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলো উত্তর দিকে হওয়ায় দূরত্বের তারতম্য থাকে, তবে পঞ্চগড় থেকে সরাসরি কোনো বিভাগীয় শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না। তেঁতুলিয়া থেকেই এর দৃশ্য সবচেয়ে সুস্পষ্ট। মাঝে মাঝে ঠাকুরগাঁও থেকেও দেখা যায়।
কাঞ্চনজঙ্ঘা কখন দেখা যায়
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার
সেরা
সময়
হলো
শরৎকাল এবং
হেমন্তকাল, বিশেষ
করে
অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ।
এই
সময়ে
আকাশ
মেঘমুক্ত ও
কুয়াশামুক্ত থাকে,
ফলে
দূর
থেকে
এর
শুভ্র
চূড়া
পরিষ্কারভাবে দেখা
যায় ।
ভোরের
আলোয়
এর
বরফাচ্ছাদিত চূড়া
সোনালী রঙ ধারণ
করে,
যা
এক
নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি
করে ।
দিনের
অন্য
সময়েও
আকাশ
পরিষ্কার থাকলে
এটি
দেখা
যেতে
পারে,
তবে
সকালের
দৃশ্যই
সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে
হলে
আপনাকে
প্রথমে
বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলায়
যেতে
হবে,
এরপর
সেখান
থেকে
যেতে
হবে
তেঁতুলিয়া উপজেলায় ।
কাঞ্চনজঙ্ঘা কীভাবে যাবেন
বাস:
- ঢাকা থেকে সরাসরি পঞ্চগড় বা তেঁতুলিয়ার
এসি ও
নন-এসি বাস পাওয়া যায় (যেমন: হানিফ, নাবিল, শ্যামলী ইত্যাদি) ।
ট্রেন:
- ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সরাসরি পঞ্চগড়
এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস বা একতা এক্সপ্রেসে পঞ্চগড় যাওয়া যায় ।
- রাজশাহী রেলওয়ে
স্টেশন থেকে সরাসরি বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেসে পঞ্চগড়
যাওয়া যায় ।
বিমান:
- বিমানযোগে
প্রথমে ঢাকা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দর-এ
যেতে হবে । এরপর সেখান থেকে সড়কপথে (প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে) প্রায় ২
ঘণ্টার মধ্যে পঞ্চগড় পৌঁছানো যায় ।
পঞ্চগড়
পৌঁছানোর পর
স্থানীয় বাস
বা
ভাড়ায় চালিত
যানবাহনে (প্রাইভেট কার/মাইক্রোবাস) তেঁতুলিয়া যাওয়া যায় । পঞ্চগড় থেকে
তেঁতুলিয়ার দূরত্ব
প্রায়
৪০ কিলোমিটার ।
কোথায় থাকবেন
তেঁতুলিয়াতে পর্যটকদের থাকার
জন্য
বেশ
কিছু
হোটেল,
মোটেল
এবং
গেস্টহাউস রয়েছে।
- তেঁতুলিয়া
ডাকবাংলো: মহানন্দা
নদীর তীরে অবস্থিত এই ডাকবাংলো থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য খুবই সুন্দর দেখা যায় । এখানে থাকতে হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (UNO)
অনুমতি নিতে হয় ।
- হোটেল/মোটেল: তেঁতুলিয়া এবং পঞ্চগড় শহরে বিভিন্ন মানের (নন-এসি ও
এসি) বেসরকারি হোটেল ও
মোটেল রয়েছে ।
- অন্যান্য
স্থান: তেঁতুলিয়া
পিকনিক কর্নার, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, শালবাহান, মাঝিপাড়া, রণচন্ডী ও
ভিতরগড় এলাকা থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালোভাবে দেখা যায় ।
কাঞ্চনজঙ্ঘার বিষয়ে কিছু বিশেষ তথ্য
- নামের
উৎস ও পবিত্রতা: তিব্বতীয়
ভাষায় "কাং-চেন-ডজো-ঙ্গা" শব্দ থেকে এই নামটি এসেছে । সিকিম এবং দার্জিলিংয়ের স্থানীয় লোকেরা এই পর্বতকে পবিত্র মনে করে পূজা করে এবং বিশ্বাস করে এটি তুষারের পাঁচটি ধন-ভাণ্ডার (স্বর্ণ, রৌপ্য, রত্ন, শস্য এবং পবিত্র গ্রন্থ) ধারণ করে ।
- দুর্গমতা: উচ্চতার দিক দিয়ে তৃতীয় হলেও, এটি বিশ্বের অন্যতম দুর্গম এবং বিপদজনক পর্বতশৃঙ্গ ।
- ইউনেস্কো
বিশ্ব ঐতিহ্য: এই পর্বতমালায়
অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় উদ্যান (Khangchendzonga National Park) ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় ।
- পরিবেশ: কাঞ্চনজঙ্ঘা অঞ্চলটি ঘন জঙ্গল, বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীতে পূর্ণ । এখানে তুষার চিতা, লাল পান্ডা ও হিমালয়ান থারের মতো প্রাণী দেখা যায় ।
মনের রঙের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url