প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ১

 

প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ১



আমি যে প্রচন্ড খারাপ, নিলজ্জ বেহায়া একটা মেয়ে সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন, নিবির ভাই ।

— এই তোর লজ্জা করেনা বড়দের মুখে মুখে এভাবে তর্ক করতে । আর তোকে না বলেছিলাম এই বাড়িতে না আসতে, তাহলে কেন এসেছিস ।


— আমার মামার বাড়ি তাই এসেছি ।


— মামার বাড়িতে এসেছিস ভালো কথা । আমার রুমে কী করছিলি তুই ।

— মামি আপনাকে ডাকছিলো । আমি আসতে চাইনি তাও আমায় পাঠিয়েছে ।


— তুই আমার ঘরে আসতে চাসনি । সিরিয়াসলি? তুই তো শুধুই আমার আশেপাশে আসার বাহানা খুজিস তাইনা, আফরা ।


— আপনার এত অপমানের পরও বারবার কেন আপনার কাছে আসি সেটা জানতে চাইবেন না?


— একদম না । তোর এসব আজাইরা কথা শোনোর ইচ্ছা বা টাইম কোনোটাই আমার নেই । তোকে যেন আর আমার ঘরে না দেখি ।


“আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি । এই লোক একটুও ভালোমতো কথা বলতে পারেনা । আমি আফরা আর নিবির ভাইয়া আমার মামাতো ভাই । ভাইয়াকে আমি অনেক ভালোবাসি কিন্তু ভাইয়া সেটা বুঝতেই চাই না । সবসময় বাজে ব্যবহার করে আমার সাথে । নিষ্ঠুর একটা ।”

আমি সোজা মামির কাছে চলে গেলাম ।


আচ্ছা মামি নিবির ভাইয়ার জন্মের সময় কী মামা খুব অর্থসংকটে ভুগছিল ।


— এসব কী কথা, আফরা ।


— তাহলে একটু মধু কিনে নিজের ছেলের মুখে দেয়নি কেন?


— বুঝেছি, আবার কিছু বলেছে ও তোকে ।


— কিছু মানে, অনেক কিছু বলছে । কথা শুনে তো মনে হচ্ছিল যেন উনার ঘরে ডাকাতি করতে গেছি আমি ।


— রাগ করিস না, মামনি । জানিস তো ওর ঘরে ও কাউকে এলাউ করেনা না ।


— সেই তো । একটু খেয়াল রেখো ঘরে আবার বউ - টও লুকিয়ে রাখতে পারে । আচ্ছা, আমি বাসায় যাচ্ছি ।


— সে কী এখনই চলে যাবি । বিকেলে গেলে হয় না ।


— না গো । এখানে থাকার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে ।


— আচ্ছা সাবধানে যাস ।


নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে এসে মন খারাপ করে বসে ছিলাম । ভাইয়া যে কেন এমন করে আমার সাথে ।


মুড ঠিক করারর জন্য বিকেলে রাহা আর আরশি কে নিয়ে বাইরে বের হলাম । রাহা হলো আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী আর আরশি আমার কাজিন । সবাই মিলে ফুচকা খেতে যাবো বলে ঠিক করলাম । সাথে টুকটাক কিছু শপিং করবো ।


শপিং শেষ করে তিনজন এসেছি ফুচকা খেতে । ভেবেছিলাম হয়ত ফুচকা খেলে মনটা ভালো হয়ে যাবে । কিন্তু এখানে এসে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো ।

দেখলাম নিবির ভাইয়া কথা আপুকে ফুচকা খায়িয়ে দিচ্ছে । নিবির ভাইয়া সবার সামনে কথা আপুকে নিজের বেস্টফ্রন্ড বলে দাবি করলেও যে ওদের ভেতরে অন্য কিছু আছে সেটা আমি ভালো করেই জানি । বেস্টফ্রেন্ডকে বুঝি কেউ এখাবে ট্রিট করে ।


মনটাই খারাপ হয়ে গেলো । চোখে পানি টলমল করছে।ওদেরকে নিয়ে ফুচকা না খেয়েই ওখান থেকে চলে এলাম । রাহা নিবির ভাইয়ার ব্যাপারে সব জানে বলে কোনো প্রশ্ন করল না আমায় । কিন্তু আরশি একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে । শরীর খারাপ লাগছে বলে চলে এলাম ।


বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম । কেন জানি না আজ খুব কান্না পাচ্ছে ।

নিবির ভাইয়া আর কথা আপুকে আমি আগেও অনেক বারর একসাথে দেখেছি । তখনও খারাপ লেগেছে।কিন্তু কেন জানিনা আজ কষ্টটা খুব বেশি হচ্ছে ।


এসে থেকে ঘরেই বসে আছি । রাতে খাবারের জন্য আম্মু  – আব্বু ডাকতে এলেও শরীর খারাপ বলে কাটিয়ে দিয়েছি । প্রচুর কেদেছি এতক্ষণ । চোখমুখ একদম ফুলে গেছে, মাথাটাও খুব ধরেছে ।


মাথা ব্যাথা কমাতে এই রাতেই একবার গোসল করলাম । রাত প্রায় তিনটা বাজে । এত রাতে ঘোসল করেছি তাহলে নির্ঘাত ঠান্ডা লাগবে । তাই ভালোমতো চুল মুঁছেই ঘুমিয়ে পড়লাম ।



রাতে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে । ভালোমতো চুল শুকিয়ে ঘুমানোর পরও কীভাবে জ্বর এলো সেটায় মাথায় ঢুকছেনা ।

মা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে । বাবা ডাক্তার আনতে গেছে।সকাল মাত্র ছয়টার কাছাকাছি,ইতিমধ্যে আমার চৌদ্দগুষ্টি হাজির হয়েছে আমার সামনে । খবর পেয়েই সবাই চলে এসেছে । সামান্য একটু জ্বর হওয়ায় এভাবে সবাইকে ডেকে আনার কী মানে বুঝিনা ।

আমার জ্বরকে অবশ্য সামান্য বলা চলে না । আমার খুব একটা জ্বর হয়না কিন্তু যখন হয় তখন একদম হসপিটালে এডমিট হওয়া লাগে ।


এত মানুষের মধ্যেও আমার চোখ শুধু নিবির ভাইয়াকেই খুজছে । আমার এত জ্বর জেনেও কী উনি আসবেন না ।


দুপুরের দিকে জ্বর একটু কমেছে । সবাই চলে গেলও মামি থেকে গেছে ।  নিবির ভাইয়া নাকি মামিকে নিতে আসবে । এই সুযোগে নিবির ভাইয়াকে একটু দেখব বলে ড্রয়য়িংরুমে এসে বসে আছি ।

কালকের ব্যাপারটা নিয়ে উনার ওপর অভিমান হয়েছিল তবুও এই বেহায়া মনটা যে উনাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে ।


একটু পরে মামি আমার জন্য কীসের যেন রস নিয়ে আসলো । জ্বরের সময় নাকি এগুলো খেলে ভালো লাগে । আমি খাবোনা খাবোনা করেও খেয়েই ফেললাম ।

প্রচন্ড তিতা ছিল এটা ।


— কেমন খেতে এটা ।


— নিবির ভাইয়ার মতো ।মানে খুব তিতা একদম রসকসহীন ।


আমার কথ শুনে মামিও হেসে দিলো । সাথে সাথে আমিও হেসে উঠলাম । আম্মুর পর মামি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে ।মামির একটা মেয়ের খুব শখ ছিল কিন্তু নিবির ভাইয়া হওয়ার পর মামি আর কনসিভ করতে পারেনি তাই আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে ।

মামা বাড়ির সবাই আমাকপ খুব ভালোবাসে । শুধু নিবির ভাইয়াই আমাকে সহ্য করতে পারেনা ।

একদিন বশত আমার হাত থেকে একটু পানি কথা আপুর গায়ে পড়ে গেছিল বলে খুব বকেছিল আমায় । একটা থাপ্পর ও মেরেছিল । সেদিন বাড়ি এসে খুব কেদেছিলাম, সেদিনও অবশ্য এমন জ্বর এসেছিল । তারপর তিনমাস মামা বাড়ি যায়নি ।

অবশেষে নিবির ভাইয়া এসে আমার কাছে মাফ চেয়েছিল ।


বসে বসে এসব স্মৃতিচারণ করছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া চলে এলো । কিন্ত উনার সাথে আবির ভাইয়াও ছিল । আবির ভাইয়া আমার নিজের ভাই । ভাইয়া একজন ডাক্তার । কিছুদিন আগে কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিল । কিন্তু ভাইয়া যে আজ আসবে সেটা আমাকে বলনি তাই রাগ করে ওখানেই বসে রইলা ।

ঠিক করছি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলব না ।


ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল

— কী হয়েছে,বনু । ভাবলাম আজ এসে তোকে চমকে দিবো কিন্তু তুই তো জ্বর বাধিয়েই বসে আছিস ।


” ভাইয়ার এই মিষ্টি কথায় আমি একদম গলে গেলাম । এই মানুষটার ওপর তো আমি রাগ কর থাকতেই পারিনা ।”


— আমি কী ইচ্ছে করে জ্বর বাধিয়েছি, বল ।


— হ্যা,সেই তো ।  তুই তো কিছুই করিসনা বরং সমস্যারা তোকে খুজে তোর ঘাড়ে এসে ঝুলে যায়, তাইনা ।


নিবির ভাইয়ার এই কথাটা শুনেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো । কোথায় আমি অসুস্থ আমাকে শান্তনা দিবে তা করে আমায় জালাচ্ছে ।

এই মানুষটা কী কখনো আমায় একটু বুঝবেনা । কেন আমাকে উনি এত কষ্ট দেন ।

রাগ কর ওখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলাম তখন উনি বললেন


— দাড়া,আফরা । তোর সাথে আমার কথা আছে ।


“উনি আবার কী বলবেন । কাল যে আমি উনাকে দেখেছি সেটা জেনে গেলো নাতো ।”

— উপরে তোর রুমে আয়, কথা আছে ।


আমাকে রুমে যেতে বলেই উনি সিড়ি দিয়ে উঠে আমার ঘরে চলে গেলেন ।


আমারও কী যাওয়া উচিত । না আমি যাবো না । এমনিতে তো আমাকে উনার আশেপাশে যেতেও মানা করেছে, এখন উনার প্রয়োজন বলে ডাকছে । আমি যাবো না ।


এসব ভাবসিলাম তখনই কেউ,,


(চলবে)

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url