প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ২
প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ২
এসব ভাবছিলাম তখনই কেউ মানে নিবির ভাইয়া আমার হাত টেনে আমার ঘরে নিয়ে যেতে লাগল ।
যাহ বাবা উনি আবার কখন নিচে এলো ।
—- কী বলবেন ভাইয়া ।
—-তোর জ্বর এলো কী করে?
—-মানে ।
—- কাল তুই আমাকে আর কথাকে একসাথে দেখেছিলি তাই বাড়ি এসে কেঁদে কেঁদে জ্বর বাধিয়েছিস তাইনা ।
—- আপনি কি করে জানলেন ভাইয়া?
—- সেটা তোর না জানলেও চলবে । কেন করিস তুই এসব?
—- আমি আপনাকে ভালোবাসি ভাইয়া । আপনার সাথে অন্য কাউকে সহ্য করতে পারিনা আমি ।
—- থাপরে তোর গাল লাল করে দিবো আমি । তোকে ভালোবাসি না আমি বুঝেছিস ।
—- আপনি কথা আপুকে ভালোবাসেন, তাই না ।
—- হ্যাঁ,আমি ভালোবাসি ওকে । হয়েছে শান্তি ।
“কথাগুলো বলেই নিবির ভাইয়া চলে গেলো । আমিও দৌঁড়ে ছাঁদে চলে গেলাম ”
আজ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । ভালোবাসা কেন এত কষ্ট দেয় ।
ছাঁদ থেকেই দেখলাম নিবির ভাইয়ারা চলে গেলো । একটু পরেই বেশ জোড়ে বৃষ্টি শুরু হলো । আজ আমার চোখের জলের মতো বৃষ্টির পানিও বাধ মানছেনা ।
একেই জ্বর তারওপর বৃষ্টিতে ভেজায় শরীরটা বেশ দুর্বল লাগছে । দাঁড়িয়ে থাকারও শক্তি পাচ্ছিনা । হঠাতই মাথা ঘুরে ছাঁদেই পড়ে গেলাম ।
জ্ঞান ফিরতেই ফিনাইলের কড়া গন্ধ নাকে এলো । বুঝতে বাকি রইল না যে আমি হাসপাতালে । চোখ খুলতেই মায়ের মলিন মুখটা চোখে পড়লো । পাশে ভাইয়া আর মামি বসে ছিলো ।
আম্মু আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মাথায় হাত রেখে বলল
—- এরকম পাগলামি কেউ করে । তোর মাথায় কী একটুও বুদ্ধি নেই । মরার শখ হয়েছে ।
—- আম্মু চুপ করো তো ।
ভাইয়া আম্মুকে চুপ করতে বলে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
—- এরকম কেউ করে? জানিস আমরা কত টেনশনে ছিলাম । নিজের সাথে সাথে আমাদের ও কষ্ট দিলি তো । আমরা তো ভেবেছিলাম আজ রাতে তোর জ্ঞান ফিরবেই না ।
“ভাইয়ার কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত দেড়টা বাজে । আমি যখন ছাঁদে ছিলাম তখন ১০ টা বেজে ছিল । আমি এতক্ষণ অঙ্গান ছিলাম । আমি কি নিবির ভাইয়ার জন্য নিজেকে একটু বেশি কষ্ট দিচ্ছি । ”
আম্মু খাবার খাইয়ে ঔষুধ খায়িয়ে চলে গেল । বাকি সবাইকেও ভাইয়া বাসায় পাঠিয়ে দিলো ।
একটুপর ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে বলল
—- কী হয়েছে বনু? তুই কোন কোন ব্যাপারে এত কষ্ট পেয়েছিস, আমায় বল ।
“আমি আর না থাকতে পেরে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম ।”
—- আমি নিবির ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসি । তাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না ।
—- তুই সত্যি নিবিরকে ভালোবাসিস । আমায় আগে কেন বলিসনি কেন?
—- আমি চাইনি এটা নিয়ে তোদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক ।
—- ঝামেলা কেন হবে?
—- নিবির ভাইয়া যে অন্য কাউকে ভালোবাসে ।
—- আচ্ছা তুই এগুলা আমার ওপর ছেড়ে দে । আমি দেখে নেবো । তুই এখন ঘুমিয়ে পড় ।
দুই দিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলাম । এই দুইদিন নিবির ভাইয়া একবারও আমার খবর নেয়নি । আমি কি এতই ফেলনা ।
আমি এবার এইচএসসি দিয়েছি । এখনো রেজাল্ট দেয়নি । তাই পড়াশোনার চাপও নেই । সারাদিন শুয়ে-বসেই কাটে । আম্মু রান্না করে, আব্বু অফিসে আর ভাইয়া হাসপাতালো আর আমি একা বসে বসে বোর হচ্ছি ।
টাইম পাস করার জন্য মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলাম । এই দুদিন ফোনের কোনো খবরই ছিল না । ফেসবুকে ঢুকেই চোখে পড়ল নিবির ভাইয়ার হাস্যজ্জল ছবি । তাদের ফ্রেন্ডস গ্রপের সবাই মিলে ট্যুরে গেছে । সবার গ্রুপ ছবি হলেও ভাইয়া তার আর কথা আপুর দুটো ক্লোজ ছবিও পোস্ট করেছে । ছবি গুলো দেখতেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ।
মোবাইলটা রেখে বাইরে চলে গেলাম ।
বিকেলে ভাইয়া এসে বলল আজ নাকি আমায় নিয়ে শপিং এ যাবে কথাটা শুনেই মনটা ভালো হয়ে গেলো ।
সন্ধ্যায় ভাইয়ের সাথে শপিং এ গেলাম । ভাইয়া আমার পছন্দ মতো সবকিনে দিলো ।
রাতে বাইরে খাওয়ার কথা থাকলেও ভাইয়ার একটা ইমার্জেন্সি আসায় ভাইয়া আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে হাসপাতলে চলে গেলো ।
বাসায় এসে দেখি মামি আর নিবির ভাইয়া এসেছে ।
আমাকে দেখে মামি বলল
—- এই তিনদিনে আমার মেয়েটা কতটা শুকিয়ে গেছে । এই কদিন হাসপাতালে নিশ্চয় ভালো খাওয়া হয়নি । তোর পছন্দের সব রান্না করে নিয়ে এসেছি ।
মামির কথা শুনে নিবির ভাইয়া মামিকে প্রশ্ন করল
—- ওযে হাসপাতালে ছিল আমাকে তো বলোনি ।
—- তুমি বিজি মানুষ, তোমাকে তো সেদিন কত ফোন করলাম তুই বিজি বলে কেটে দিলি । তারপর তো ট্যুরে চলে গেলি ।
ভাইয়া কিছু বলবে তার আগেই আম্মু এসে ভাইয়াকে খেতে নিয়ে গেলো আর আমাকে বললো
—- ফ্রেশ হয়ে আয় আফরা খাবার দিচ্ছি ।
আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে এলাম । নিবির ভাইয়া তাহলে এতটাই বিজি ছিল কথা আপুর সাথে ।
ফ্রেশ হয়ে এসে মোবাইলটা হাতে নিয়েই দেখলাম অনেকগুলো মেসেজ এসেছে । একটা মেসেজ ওপন করতেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল ।
মেসেজে লেখা ছিল-“তুমি কী জনো শুভ্রপরী তোমার শুভ্রতায় আমি প্রতিনিয়ত ডুবে মরছি”
আমাকে এমন মেসেজ কে পাঠাবে । তখনই আম্মুর ডাকাডাকিতে নিচে গেলাম । বাকি মেসেজগুলো আর দেখা হলোনা ।
টেবিলে নিবির ভাইয়ের থেকে যথেষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে বসেছি ।
—- এডমিশনের ব্যাপারে কী ভাবলি, আফরা ।
নিবির ভাইয়ার কথায় তার দিকে তাকিয়ে বললাম
—- এখনো কিছু ভাবিনি ভাইয়া ।
—- মাথা থেকে উল্টোপাল্টা সব চিন্তা ঝেরে ফেলে পড়ায় মনোযোগ দে ।
ভাইয়ার কথার কোনো উওর দিলাম না । ভাইয়া যে আমাকে তার কথা ভুলে যেতে বলছে সেটা আমি ভালোই বুঝেছি ।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
মাঝরাতে হঠাতই ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল । এতরাতে আমায় কে ফোন করল ।
ফোনটা ধরতেই কেউ একজন বলল
—- কেমন আছো শুভ্রপরী ।
—- কে আপনি আর আমার নাম্বার কই পাইছেন আর এত রাত ফোন করেছেন কেন?
—- আমি তোমার খুব পরিচিত একজন ।
—- মানে?
—- গেস কর আমি কে?
—- প্লিজ বলবেন কে আপনি?
—- আমি হলাম তোমার,,,,,,,
(চলবে)