প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ৩

 

প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ৩


প্রথম প্রেম - Prothom Prem । Valobashar Golpo - পর্ব ৩




আমি তোমার খুব কাছের একজন ।

—- আচ্ছা, ছোটোবেলায় কী আপনার আকিকা দেওয়া হয়েছিল ।



—- এইগুলো কেমন প্রশ্ন? অবশ্যই দেওয়া হয়েছিল ।

—- তাহলে আকিকা দিয়ে যে নাম রাখা হয়েছিল সেটা বলেন  নয়তো ফোন রাখেন ।

—- আরে বাহ্ ! আমার নাম জানার এত আগ্রহ । আচ্ছুা শোনো তাহলে আমার নাম প্রহর । এবার দেখি আমায় কেমন খুঁজে বের করতে পারো ।

” কথাটা বলেই লোকটা ফোন কেটে দিলো । আজব লোক তো, আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলো ।
আমিও আর সাতপাচ না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম ।”



কেটে গেছে সাতদিন । সবকিছুই তার আপন গতিতে চলছে । তেমনি আমার জীবনও ।

একদিনে একবারও আমার নিবির ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি । মামাবাড়ি যাওয়াটাও কমিয়ে দিয়েছি । বেশ কিছু দিন ধরেই মামি বারবার ফোন করছে ও বাড়ি যাওয়ার জন্য । তাই ঠিক করছি আজ বিকেলে যাবো । তবুও নিবির ভাইয়ার মুখোমুখি হতে চাচ্ছি না ।

বিকেলে নিবির ভাইয়াদের বাসায় গিয়ে বেল বাজাতেই নিবির ভাইয়া এসে দরজা খুলে দিলো ।

—- কী চায়?

—- বাথরুম পরিস্কার করতে আসছি ।

—- What!!!

—- কী হোয়াট । আমাকে দেখে আপনি বুঝেন নাই যে আমি এখানে কী করতে আসি । যত্তসব সরেন দেখি, ভেতরে যেতে দেন ।

” নিবির ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়েই আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম । বাড়ি থেকেই ঠিক করে আসছি এখন থেকে নিবির ভাইয়াকে একদম ইগনোর করব আমি । তাকেও বোঝাবো যে আমারও আত্মসম্মান আছে ।”

আমিও সোজা মামির কাছে চলে গেলাম । অনেকক্ষন গল্প করলাম দুজন । রাত প্রায় ৮ টা বাজে । রাতে ভাইয়া বাসায় যাওয়ার সময় আমায় নিয়ে যাবে ।

কিছুক্ষন পর মামির এক প্রতিবেশী এসে মামিকে ডেকে নিয়ে গেলো তার কী যেন সমস্যা হয়েছে তাই । বাড়িতে এখন আমি একাই । নিবির ভাইয়াও আছে তার ঘরে ।

আমি সিড়ি দিয়ে নেমে নিছে যাচ্ছিলাম তখনই কিছু একটার সাথে বেধে পড়ে যেতে নিলেই কেউ আমাকে ধরে ফেলে কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা । দুজনেই নিচে পড়ে গেলাম ।

কোমরটা বুঝি ভেগেই গেলো । পরক্ষনেই মনে পড়ল নিবির ভাইয়া তো আমাকে ধরবেনা তাহলে কে ধর ল। ভূত না তো আবার ।
তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে । বেশ সুদর্শন ।

—- এই আপনি কে হ্যাঁ আর আমাকে কেন ধরলেন ।

—- জী আর বলি বলুনতো ভাবলাম আপনাকে ধরে হিরোদের মতো পরার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিবো কিন্তু তা আর হলো কই । মাঝখান থেকে নিজেও পরে গেলাম ।

—- বেশ হয়েছে পড়ে গেছেন । খুব শখ না হিরো হওয়ার ।

কী হচ্ছে এখানে ।
নিবির ভাইয়ার কথা শুনে দুজনেই তার দিকে তাকালাম । উনি ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললেন

—- প্রহর, ঘরে আয় । কাজ আছে ।

নিবির ভাইয়ার কথা শুনেই মনে পড়ল ঐ লোকটার কথা । সেও নিজের নাম প্রহর বলেছিল । গত সাতদিনেও আমার ফোনে এমন অনেক মেসেজ এসেছে যদিও আমি সেগুলোকে একদম ইগনোর করছি ।
আচ্ছা, এই লোকটাই কী সেই লোক । না সেটা কীভাবে সম্ভব ।

—- এখানে দাড়িয়ে এত কী ভাবছিস, আফরা ।

মামির কথায় ধ্যান ভাঙল ।

—- আচ্ছা মামি তোমাদের বাড়িতে এসছে ঔ ছেলেটা কে?

—-ওহ, প্রহর । ও তো আমার বড় ভাইয়ের ছেলে ।

—- ওহ ! আমি কেন তাকে আগে দেখিনি ।

—- ওরা সবাই তো দেশের বাইরে থাকত । তাই হয়ত দেখিসনি । গত কালই দেশে এসেছে ।
আচ্ছা আবিরের আসার সময় হয়ে গেছো, চল তোকে খেতে দিয়ে দেয় ।

—- হুম, চলো ।


রাতে ভাইয়ার সাথে বাড়ি ফিরছিলাম । তখন ভাইয়া আমায় জিঙ্গেস করলো

—- আফরা, তোর সাথে কি নিবিরের আর কোনো কথা হয়েছে ।

—- না ভাইয়া । আচ্ছা তোর তো আজকে অফ ডে ছিলো । তাহলে হসপিটালে কেন গেলি ।

—- তুই ছিলি না তাই । তোকে ছাড়া বাসায় থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না ।

—- তুই একটা বিয়ে কেন করিসা । বউ থাকলে সব ভালো লাগবে ।

—- তুই খুব পেকে গেছিস তাই না ।

—- সবই তোর অবদান ।

—- তাই বুঝি ।

আজ শুক্রবার । আজ আমাদের বাসায় মামা আর মামির বড় ভাইদের দাওয়াত করা হয়েছে । মামির বড় ভাই নাকি আব্বুর খুব ভালো বন্ধু ছিল অথচ আমি কিছুই জানতাম না ।

সকাল থেকেই খুব বোর হলাম । মামি সকাল সকাল এসেই মায়ের সাথে কাজ করছে । আমাকে কোনো কাজে আমায় হাত লাগাতে দিচ্ছে না । অসুস্থ থাকায় যদিও অন্য সময়ও কোনো কাজ করিনা ।

পাশেই আরশিদের বাড়ি । তাই ভাবলাম বোর হওয়ার চেয়ে আরশিকে জ্বালিয়ে আসি ।

আরশিদের বাড়িতে এসে দেখলাম ওর ভাই খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু লিখছে । ওর নাম আহির । মাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে ।

—- কী লিখিস পিচ্ছি ।

—- আরে আপুনি তুমি আসছো । একটু সুন্দর করে চিঠিটা লিখে দাও তো ।

—- কিসের চিঠি?

—-আরে আমার গার্লফ্রেন্ড রাগ করেছে তার রাগ ভাঙানোর জন্যই এই চিঠিটা লিখছিলাম ।

“আহিরের কথা শুনে যেন আমি শূন্যে ভাসছি । ছেলে বলে কী।”

—- এই ছেলে, বয়স হয়নাই দশ বছর এখনই গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছিস ।

—- হ্যাঁ আপু । আমাদের দুই বছরের রিলেশন ।

আচ্ছা আপু আমি যাই আম্মু ডাকছে । তোমাকেই বললাম কিন্তু কাউকে বলো না ।

এখন মনে হচ্ছে জীবনে কী করলাম । জীবনটাই বৃথা । এতবছরে ও নিবির ভাইয়াকে পটাতে পারলাম না আর এদের দুই বছরের রিলেশন ।




আরশির সাথে খানিক্ষণ গল্প করে বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়ে নিলাম ।
সবাই হয়ত নামাজ পর আসবে । এদিকে পেটের মধ্যে ইদুর দৌঁড়াচ্ছে । এখন আম্মু জীবনেও খেতে দিবেনা ।
তাই মোবাইলটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম ।

একটু পরে ঘরে এসে দেখি বিছানায় বেশ সুন্দর একটা প্যাকেট রাখা । সুন্দর কাগজে মোড়া । কিন্ত এটা কে দিলো।আব্বু বা ভাইয়া দিলো তো আমাকে বলতোই ।
আমি কি এটা খুলে দেখবো ।

বক্সটা খুলে দেখি একটা কালো জামদানি শাড়ি আর একজোড়া ঝুমকা ।
কালো জিনিস বরাবরই আমার খুব পছন্দ । তাই শাড়িটাও বেশ ভালো লাগল ।
তখনই আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো ।

“শুভ্রপরী তোমার শুভ্রতায় কালো রংটা বড্ড মানায় । সবাই তো নীল শাড়ি পরে তুমি নাহয় কালোই পড়লে ।”

আমার কী গিফটা নেওয়া উচিত । কে না কে দিয়েছে ।
আচ্ছা রেখে দি যদি কখনে তাকে পাই তাইলে ফেরত দিয়ে দিবো ।

মেহমানরা চলে এসেছে । মামির ভাইয়ের বউ বেশ সুন্দর দেখতে অনেকটা বিদেশিদের মতো দেখতে ।

উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল -

—-বাহ্! মেয়েটা তো মাশাল্লাহ্ । এমন একটা মেয়েই খুঁজছিলাম প্রহরের জন্য ।

উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম । তখনই,,,,,

(চলবে)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url