হৃদয়ের অনুভূতি - রোমান্টিক প্রেমের গল্প । পর্বঃ ০৪

 

হৃদয়ের অনুভূতি - রোমান্টিক প্রেমের গল্প । পর্বঃ ০৪

হৃদয়ের অনুভূতি

পর্বঃ ০৪



আয়ান দেখতে পায় নেহার বাসার গেটে তালা ঝুলছে। আয়ান ভিশন কৌতুহল নিয়ে দারোয়ান চাচাকে জ্বিগাসা করলো.......


-- চাচা এখানে তালা দেওয়া কেনো?....


-- ওহহ, ওনারা চলে গেছে এখান থেকে।


দারোয়ান চাচার কথাটা সোজা আয়ানের বুকে গিয়ে বিধলো। আয়ান দারোয়ান চাচাকে আবারও জ্বিগাসা করলো......


-- চাচা কোথায় গিয়েছে?... বা কবে ফিরবে নেহারা?... কিছু কি জানেন?


-- না বাবা ঐ সব জানি না। খালি হুনছি অনেক দূরে চইলা গেছে। আর ফিরবো না....


কথাটা শোনামাত্র আয়ান চিৎকার করে উঠলো। দারোয়ানের কলার ধরে চেঁচিয়ে বলল.....


-- ফিরবে না মানে!.... কে বলছে ফিরবে না? এই রাজ দেখ এই চাচা কি সব উল্টা পাল্টা বলছে। নেহা আমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। আমি ওকে কোথাও যেতে দিবো না......


-- কলার ছাড়ো মিয়া। আমি উল্টা পাল্টা কিছু কই নাই। সিয়াম স্যার আমারে যা কইছে আমি তোমারে তাই কইছি......


রাজ আয়ানের পরিস্থিতি ভালোই আচ করতে পারছে। রাজ জানে আয়ান এখন নিজের কন্ট্রলে নেই। রাজ দৌড়ে এসে আয়ানকে সরিয়ে নেয় দারোয়ান চাচার কাছ থেকে। রাজ আয়ানকে চেঁচিয়ে বলে......


-- কি করছিস আয়ান? আর ইউ ম্যাড?.... ওনার কলার চেপে ধরেছিস কেনো? উনি তোর বাবার বয়সি। 


-- ওহহহহ, সরি। আসলে এই সব কথা শোনার পরে.... চাচা আমাকে মাফ করবেন। আসলে আমার মাথাটা ঠিক নেই। প্লিজ চাচা ক্ষমা করবেন আমায়.....


-- আয়ান চল বাসায় চল।


-- আমি কেনো বাসায় যাবো? নেহার সাথে দেখা করার জন্য এসেছি। আমি ওর সাথে দেখা না করে যাবো না। তুই জানিস না। ভিশন অভিমানী মেয়ে হলো নেহা। ও আসবে দেখিস একটু পরেই চলে আসবে....


-- হ্যাঁ, চলে আসবে তো। আগে তুই বাসায় চল তারপর ও চলে আসবে.....


-- আমাকে পাগল মনে হয় তোর? ও আমার বাসায় কখনও আসবে না। এখানেই অপেক্ষা করি আমি। ও ফিরে আসলে কথা বলে যাবো।


-- আয়ান পাগলামি করিস না। নেহা তোকে ছেড়ে চলে গেছে। আর কখনও ফিরবে না। বুঝতে পেরেছিস তুই!... আয়ান, নেহা তোর জীবন থেকে চলে গেছে। বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ.....


-- চলে গেছে?..... 


* আয়ান নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে নেহার বাড়ির দিকে। কোনো কথা বলছে না সে। নেহা চলে গেছে তা জানার পরেও আয়ান চুপ। আয়ানের অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে রাজ একটু বিচলিত হয়ে পরে। " আমরা প্রায় অনেকেই হয়তো কোনো না কোনো সময় আমাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছি। সো প্রিয়জনে হারানো কতটা কষ্ট কর তা কি প্রকাশ করার অপেক্ষা রাখে"?...... . কিছু কষ্ট এমন হয় যে তা প্রকাশ করা যায় না। আর না যায় সহ্য করা।  রাজ আয়ানের বাহু ধরতেই আয়ান এক ঝটকায় রাজের থেকে দূরে সরে আসে......


-- শোন রাজ আমি ভালোবাসায় হেরেছি। জীবন যুদ্ধে নয়। আমি নিজেকে সামলে নিতে পারবো।


* আয়ান রাজকে রেখে নিজে একাই বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় নেহার বাড়ির সামনে থেকে। রাজ জোর করেছিলো তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য কিন্তু আয়ান রাজি হয়নি। মিনিট দশেক পর আয়ান নিজের বাসার সামনে চলে আসে। ফর্সা উজ্জ্বল চেহারাটা লাল হয়ে আছে আয়ানের। সচরাচর এমন হয় না তার। তবে খুব বেশি রেগে গেলে এমন হয়। আয়ান নিজের রুমে এসে ফ্রিজ থেকে কয়েকটা এ্যালকাহলের বোতল বের করে নিলো। ব্যল্কনির দিকে গিয়ে বসলো সে। আকাশটা মেঘলা হলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আয়ান আনমনে নেহার কথা গুলো কল্পনা করতে লাগলো আর ড্রিংক করতে থাকলো।


✒️ বাসা থেকে বেরিয়ে এয়ার পোর্টে চলে আসি আমি। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আমার। ভিশন রকম কষ্ট হচ্ছে আয়ানের কথা ভেবে। ওকে ভূলে কি করে থাকবো আমি?.... বার বার ওর বলা প্রতিটি কথা মনে পরছে আমার। ওকে একটা বার দেখতে খুব ইচ্ছে করছে আমার। ওর সাথে একটু কথা বলার তৃষ্ণায় কাতর আমি। হায়রে ভালোবাসা। না দেয় ভালো থাকতে আর না দেয় ভূলে থাকতে....

এয়ার পোর্টের ফরমালেটিস গুলো পূরন করে আমি বিমানে বসলাম। এই দেশ ছেড়ে যাওয়ার কষ্টের থেকে হাজার গুণ বেশি কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে আর কখনও আয়ানকে দেখতে পাবো না আমি। আর কখনও ওর চোখে ভালোবাসা খুঁজতে পারবো না। আয়ান হয়তো নিজের জীবন সাজিয়ে নিবে নতুন করে। হ্যাঁ, ও পারবে কিন্তু আমি পারবো না। আমি না হয় ওর ভালোবাসার অনুভূতি গুলো আগলে রেখে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিব। শুধু বিধাতার কাছে এই টুকুই চাওয়া " সে যেনো আয়ানকে ভালো রাখে "..... আজ চিৎকার করে বলে দিতে ইচ্ছে করছে, জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে এই পৃথিবীকে। আয়ান তোমাকে আমি ভালোবাসি। হ্যাঁ, তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি। ওকে না বলা কথা গুলো সহ্য রকম কষ্ট দিচ্ছে আমার হৃদয়কে। তাকে ঘিরে আমার হৃদয়ের অনুভূতি সারা জীবন এমনই থাকবে.......


* বিমানে বসার পনের মিনিট পর আমাদের  প্লেন টেক অফ করলো। আমি জানার পাশের একটা সিটে বসে আছি। বাবা মা আমার বাম পাশে। জানালার ওপারে তাকিয়ে নিজের চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আয়ান যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসতো তবে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতো না। অন্য কোনো মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক জড়াতো না। আমাদের সম্পর্কের মাঝে কখনও দূরত্ব তৈরি হতো না। আজ আমাকে এভাবে কাঁদতে হতো না....


* নেহা কথা গুলো ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ মুছে ফেলল। নতুন শহরে নতুন করে বাঁচতে হবে তাকে। আর কাউকে প্রয়োজন নেই তার। ঐ দিকে আয়ান মরণ  নেশায় মেতে উঠেছে। একের পর এক ড্রিংক্স নিচ্ছে সে। ড্রিংক করা শেষ। আয়ানের চোখ থেকে এমনি এমনি পানি পরছে। আয়ান ব্যক্লনি থেকে সোজা ছাদে চলে আসে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করলো সে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আজ সারাদিন মেঘলা আকাশ ছিলো কিন্তু এখন সব মেঘ সরে গেছে। আকাশ ভরা তারা গুলো টিপটিপ করে জ্বলচ্ছে। আয়ান ও তারা গুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো খানেকক্ষন। পরিবেশটা নিরব। সকল নিরবতা ভেঙ্গে আয়ান চিৎকার করে বলতে লাগলো..........


-- নেহা তুই একটা বেইমান মেয়ে। একা ফেলে  ছেড়ে চলে গেলি তো তুই। আজ আমি হেরে গেছি তোর কাছে। দিব্বি জিতে গেছিস তুই। তোকে আর কখনও পাবো না আমি। আরে তুই তো আমায় ভালোবাসিস জানি আমি। কি করে পারলি আমাকে একা করে চলে যেতে?.... এতো অভিমান তোর!... আমি ভূল করেছি। হ্যাঁ, তোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আমি ভূল করেছি। আচ্ছা বল কি করতাম আমি? রিহানের হতে দিতাম তোকে? তুই জানিস না আমি তোর পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না। তাই তো তোকে কষ্ট দিতে, রিহানের থেকে আলাদা করতেই আমি এমনটা করেছি। নেহা প্রিয়জন পাবি তুই কিন্তু আমায় মতো একটা মানুষ পাবি না..... আমি অপরাধ করেছি হ্যাঁ তাই বলে ছেড়ে চলে যাবি? একটা সুযোগ তো দিতে পারতি আমায়!... বিশ্বাস কর তোর সব অভিযোগ, অভিমান আমি ভূলিয়ে দিতাম......


* আয়ান কথা গুলো বলতে গিয়ে বার বার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছে। "কিছু মানুষ আমাদের জীবনে শুধু প্রিয় হয়ে থাকে না। তারা ধিরে ধিরে অভ্যাস পরিনত হয়। আর কখনও যদি সেই  মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে যায় তবে তার শূন্যতা খুব মারাত্মক ভাবে অনুভব হয়। এটাই সত্যি"..........


✒️ নেহা তার স্বপ্ন পূরণের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো। নেহা চলে আসে আমেরিকায়। প্লেন থেকে নেমে নতুন শহর নেহাকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই শহরের মতোই এখানকার মানুষজন। নেহা এয়ার পোর্ট থেকে নিজের নতুন বাসায় চলে আসে। বাসায় আসতেই নেহা দেখতে পেলো তার চাচাতো ভাই আসিফকে। আসিফের সাথে তার দেখা হয়েছিল সেই ছোট্টবেলায়। আসিফের সাথে বলতে গেলে নেহা একদম ফ্রি। আসিফ ও নেহাকে অনেক বছর পরে দেখতে পেলো। আসিফ নেহাকে দেখতে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। আসিফ নেহাকে রাগানোর জন্য বলে..........


-- বাংলাদেশ থেকে কি সব ছোট লোক গুলারে বের করে দিচ্ছে নাকি?.... না মানে তুই হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই এখানে চলে এলি তাই জ্বিগাসা করলাম......


আসিফ ভেবেছে নেহা তার কথাতে সব সময়ের মতো রেগে যাবে। অনেক কথা শোনাবে তাকে। কিন্তু আসিফকে অবাক করে দিলো নেহা। নেহা আসিফকে সরাসরি বলে দিলো.......


-- দেখ ভাই আমার মন ভালো নেই। দয়া করে ফাজলামি করিস না প্লিজ!....


-- এই নেহা কি হয়েছে তোর?.... এতো বছর পরে আমাদের দেখা হলো আর তুই কিনা মুড অফ করে আছিস!.... 


-- এতো বছর পরে দেখা হলে বুঝি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতে হয়!?.....


-- না আমি সেটা বলতে........


-- আমার রুমটা কোন দিকে?...


-- এইতো সিরি দিয়ে সোজা উঠে যা। বা দিকে তোর রুম


-- ধন্যবাদ.....


* নেহা ব্যাগ নিয়ে তার রুমের দিকে চলে যায়। নেহার আচরন অনেক বদলে গেছে। সব সময় হাসি খুশিতে মেতে থাকা মেয়েটার মুখে বিন্দুমাত্র হাসি নেই। নেহাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক চিন্তা ভর করে আছে তার উপর। আসিফ নেহার বাবা মিস্টার সিয়াম সাহেবকে বলতে লাগলো.......


-- আংকেল নেহার কি হয়েছে? ও তো কখনও এমন করে নাই। অনেকটা বদলে গেছে নেহা। কি হয়েছে?......


আসিফকে প্রথমে না করে দেয় নেহার বাবা। কিন্তু আসিফের জোরে উনি সবটা বলে দিতে বাধ্য হয়। আসিফ সবটা শোনার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে......


-- এই সময় নেহার পাশে আমাদের থাকা উচিৎ। ওকে একদম ওর ইচ্ছে মতো থাকতে দেওয়া উচিৎ। সময়ের সাথে সাথে নেহাও মানিয়ে নিতে পারবে। তাছাড়া যদি ওকে ব্যস্ত রাখা যায় তবে আয়ানের কথা ওর আর মনে পরবে না....


-- হুম, সেই জন্য ভাবছি এখানে একটা বিজনেস শুরু করবো। নেহা যদি ধিরে ধিরে বিজনেসে সাহায্য করতে থাকে তবে ও ওর অতিত গুলো ভূলে পারবে।


-- ঠিক বলেছেন আংকেল। আমি সব ব্যবস্থা করছি.......


✒️ আয়ান ছাদের উপর পরে আছে। প্রচুর  নেশা করেছে আজ। আয়ানকে রুমে না দেখতে পেয়ে পুরো বাড়িটা তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছে তার বাবা। অবশেষে ছাদে এসে তারা খুঁজে পেলো আয়ানকে। ছাদের এক কোনায় পরে আছে সে। আয়ানের বাবা মা দৌড়ে চলে আসে তার কাছে। নিজের ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখবে তারা কখনও কল্পনাও করেনি। আয়ানের বাবা আয়ানকে ডেকে তুললো.........


-- আয়ান বাবা উঠ। কি হয়েছে তোর? এই সব কি করেছিস তুই?


-- নেহা, বাবা নেহাকে আমি কষ্ট দিয়েছি। ও সেই জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি। নিজের ভূলের জন্য নিজেকে আঘাত করছি.....


* আয়ান কথা বলার মাঝে বার বার ইমোশনাল হয়ে পরছে। একটু পর আয়ানকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো তার রুমে। আয়ানকে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে তার বাবা মা নিজেদের রুমে চলে গেলো। তারা নিজেদের ছেলেকে এতোটা কষ্টের মধ্যে দেখতে চায় না। তাই নেহাকে এনে তার ছেলের মুখে হাসি দেখতে চায় তারা। যেমন করে ছোট্ট বেলায় আয়ানের সব আবদার তারা পূরণ করে এসেছে। ঠিক তেমন করেই। কিন্তু কি করে নেহাকে আনবে তারা? নেহা যে আর তাদের নাগালে নেই। আয়ান বরাবরই তার বাবা মা এর আদরের ছেলে ছিলো। সব সময় আয়ানের আবদার গুলো পূরণ করেছে তারা। কিন্তু আজ কোনো ভাবেই তারা তাদের সন্তানের আবদার পূরণ করতে পারবে না। তাদের সন্তানের ভালো থাকাটা হয়তো আর কখনও তাদের দেখা হবে না।


* সকাল হতেই আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায়। বিছানা থেকে উঠে বসে আয়ান। আচমকাই আয়ানের..............



* বিছানা থেকে উঠে বসে আয়ান। আচমকাই আয়ানের সামনে চলে আসে তার মা। আয়ানের মা এর চোখ বেয়ে পানি পরছে। আয়ান চমকে গিয়ে বলে.....


-- মা তুমি এতো সকালে আমার রুমে.... কাঁদছো কেনো মা?.....


-- আয়ান ছোট বেলা থেকে তোকে খুব আদর করে যত্ন দিয়ে বড় করেছি আমরা। তোর খুশির জন্য সব সময় আমরা তোর সব কথা শুনেছি। একটা অনুরোধ করতে এসেছি‌আজ যদি তুই আমাদের অনুরোধ টুকু.......


-- উফফফফ, মা অনুরোধ না। আদেশ করো তুমি। তুমি যা বলবে তাই হবে।


-- নেহা কে ভূলে নতুন ভাবে জীবন শুরু কর। আয়ান তোর কষ্ট আমরা কি করে সহ্য করবো? তুই আমাদের ছেলে। আমরা চাই তোর সব সময় মঙ্গল হোক......


বাঁকা হাসি দিয়ে আয়ান বলল......


-- হ্যাঁ, মা নেহাকে ভূলে যাবো। কিন্তু কি করে ভূলবো? আমার হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতিতে নেহা জড়িয়ে আছে। ওকে এই জন্মে ভূলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।


-- নেহাতো চলে গেছে। ওতো নিজের জীবন ঠিক গুছিয়ে নিবে। তবে তুই কেনো ওকে ভেবে কষ্ট পাবি? নিজেকে শেষ করে ফেলবি?...


-- মা আমি নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছি না। নিজের অপরাধ গুলো জন্য নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি।


-- আয়ান বাবা তুই এইভাবে কষ্ট পাবি তা আমরা কি করে সহ্য করবো?....


-- সহ্য করতে পারছো না!?... জানো মা আমিও নেহার এই দূরে চলে যাওয়াটা সহ্য করতে পারছি না। আমার মুখে তখনই হাসি ফুটবে যখন নেহা আমার জীবনে আবার ফিরে আসবে.....


* আয়ান কথাটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আয়ানের মা চুপ করে আছে। কি বলবে সে? আয়ানকে শান্তনা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা উনি করেননি। আয়ান নিজের মাকে নিরব দেখে ঠোঁটের কোণে মিছক হাসি এঁকে বলল.........


-- হাহাহাহা মা তুমি মন খারাপ করে বসে আছো যে? আচ্ছা যাও সরি আমি আর কোনো পাগলামি করবো না। নিজের মন মতো আর কোনো কাজ করবো না‌। আজ থেকে অফিসে যাবো। তুমি একদম টেনশন ফ্রি থাকো।


* আয়ানের কথায় তা মা একটু শান্তি পেলো। আসলে এমন কোনো বাবা মা নেই যে নিজের সন্তানের অমঙ্গল চায়। সে সন্তান যত খারাপই হোক না কেনো। আয়ান ফ্রেশ হতে চলে যায়। আজ থেকেই অফিস জয়েন করবে সে। 


-- নেহা উঠে পর মা সকাল হয়ে গেছে তো....


-- উমমমমম......


-- আহা উঠ না।


নেহা চোখ কচলাতে কচলাতে তার মাকে বলল....


-- কি হয়েছে মা? এই মাত্রই তো চোখ দুটো বন্ধ করলাম।


-- এই মাত্র মানে? সারা রাত কি করেছিস তুই?.....


-- জেগে ছিলাম মা। দুচোখে বিন্দুমাত্র ঘুম ছিলো না আমার.....


-- এতোই যখন ভালোবাসিস আয়ানকে তা হলে দূরে চলে আসলি কেনো?


-- ওর সুখের জন্য চলে এসেছি আর আমি ওকে ভালোবাসলেও আর কখনও ওকে নিজের লাইফে ফিরে পেতে চাই না...


-- হুম.......


* নেহার মা চলে গেলো। কাল রাতে নেহা আয়ানের কিছু ছবি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরেছিলো। সেই ছবি গুলো খুঁজতে লাগলো বিছানায়। সম্পূর্ণ বিছানা ভালো করে খুঁজেও পেলোনা ছবি গুলো। নেহার মন খারাপ হয়ে গেলো। একি করে সম্ভব?... আয়ানের ছবি গুলো হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলো কোথায়?.... এই রুমে তো আমি ছাড়া অন্য কেউ আসে না। ছবি গুলো কোথায় যেতে পারে? এই ছবি গুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শুধু মাত্র আমি জানি। উফফফফ আল্লাহ কি কোথায় গেলো?.....


নেহার অনেক খোঁজাখুঁজির পর ও কোনো লাভ হলো না। নেহা ছবি গুলো খুঁজে না পেয়ে মন খারাপ করে বসে রইল।


-- মানুষটাকে তো হারিয়েছি এখন তার ছবি গুলো। কি করে তাকে না দেখে থাকবো আমি?...


* একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নেহা ফ্রেশ হয়ে নেয়। কি করবে সে?.. হয়তো আয়ানের মতো আয়ানের ছবি গুলো তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। নেহা নিজের রুম থেকে চলে যায় নাস্তা করার জন্য। আজ নতুন অফিসে যাবে নেহা। নেহা খাবার টেবিলে বসতেই দেখতে পেলো আসিফকে। আসিফ নেহার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নেহা ঐ দিকে কোনো পাত্তা দিলো না। নেহা নিজের খাবার খেতে লাগলো। হঠাৎ করেই আসিফ নেহাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল......


-- কারো মন হারায় আর কারো ছবি!...


নেহা আসিফের কথার কোনো মানে বুঝতে পারলো না। আসিফ  নেহাকে নিরব দেখে আবারও বলতে লাগলো.......


-- আহহহহ কারো মনে কত আনন্দ আর কারো মনে ছবি হারানোর বেদনা...


নেহা এইবার বুঝতে পারলো আসিফের হাসির কারন। আসিফ তা হলে আয়ানের ছবি লুকিয়েছে। মনে মনে বলল নেহা। নেহা রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে আসিফের দিকে। আসিফ একটু হেসে নেহাকে বলল......


-- কিরে পাগলি এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?..


-- তো কি করবো? নাচবো আমি?.....


-- হাহাহাহা হ্যাঁ, তাই কর। মনোরঞ্জন হবে একটু....


-- যাস্ট শাট আপ আসিফ। আমি তোর সাথে মজা করছি না। আমি সিরিয়াস। ভালো চাইলে ছবি গুলো এখন দিয়ে দে অন্যথায়.....


-- কি করবি তুই!?......


-- যা তুই কখনও কল্পনাও করতে পারিস নাই তাই করবো।


নেহার কথা ও অগ্নি দৃষ্টি দেখে আসিফ ঘাবড়ে গেল। পকেট থেকে পট করে ছবি গুলো বের করে টেবিলের উপর রাখলো সে। নেহা ছু মেরে ছবি গুলো নিজের দখলে নিয়ে নিলো। সত্যিই ছবি গুলো পাবার পরে নেহার মলিন মুখে একটু শান্তির দেখা এলো। নেহাকে এমন বদলে যেতে দেখে আসিফ বলল.....


-- এতোই যখন ভালোবাসিস তবে চলে এলি কেনো?


-- দূরত্ব তৈরি করেছি বাধ্য হয়ে। যাতে করে আমার গুরুত্ব সে উপলব্ধি করে....


-- ওহহহহ,,


✒️ নেহা নাস্তা শেষ করে অফিসে চলে আসে। নতুন অফিস। নতুন মানুষ। সব মিলিয়ে নেহা বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরে গেলো। নিজের অজান্তেই এতো অপরিচিত মুখের মাঝে নেহা আয়ানকে খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ করে নেহার অফিসে একজন স্টাফ এসে নেহাকে এক তোরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। নেহা আনমনে থাকায় হঠাৎ চমকে যায় সে। নেহা তার কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। অফিসের সকলে নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। নেহা এবার পুরো পুরি লজ্জায় পরে গেলো। নেহা মুচকি হেসে নিজের চেম্বারে চলে আসে। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে তার চেম্বার। চেম্বারে আসতেই নেহার মনে আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো। এখান থেকে নেহাকে নিজেকে তৈরি করতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে হবে তাকে। নিজের দূর্বলতাকে সফলতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে.......


* আয়ান নাস্তার টেবিলে বসে তো আছে ঠিক কিন্তু তার গলা দিয়ে কোনো খাবার নামছে না। বার বার মনটা অস্থির করে উঠছে তার। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার বুকের বাম পাশে। এই যন্ত্রনা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে তাকে নেহার কথা। নেহার শূন্যতা তার বুকে ভিশন আঘাত করে চলেছে আজ। এই যন্ত্রনা প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার জন্য তৈরি হয়েছে। খাবার টেবিলে নেহার কথা মনে পরতেই আয়ানের চোখের পাতা ভারী হয়ে গেলো। আয়ান চেয়ারের পিছনে রাখা ব্লেজারটা তুলে দ্রুত বেরিয়ে যায় খাবার রুম থেকে। আয়ান চোখের জল মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট করলো। নিজের মনকে মানাতে পারছে না সে, নেহা আর তার নেই....... আয়ান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে নেহাকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকলো। নেহা চলে গেছে। কোথায় যেতে পারে ও? আচ্ছা কেমন আছে সে? হয়তো খুব ভালোই আছে। কেনো থাকবে না বলুন!... পাগলিটা আমাকে হারিয়ে নিজে জিতে গেছে। হয়তো দূর থেকে আমার অবস্থা দেখে হাসছে। আচ্ছা ও যদি আমায় ভালোবাসে তবে কি আমার কষ্টটা একটু হলেও বুঝতো না। ও জানেনা আমি ওকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। হয়তো এই জন্যই আমাকে শাস্তি দিচ্ছে সে.......


✒️ আয়ান অফিসে আসতেই সবাই নিজের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আফটার অল বস বলে কথা। আয়ান মাথাটা নিচু করে ডান হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে বসতে বলল। আয়ানের কাছে এই অফিস নতুন না। আয়ান নিজের চেম্বারে গিয়ে বসলো। মন খারাপ দূর করে কাজে মন দিতে হবে। আয়ান একটু ড্রিংক্স করে নিলো। দিন দিন ড্রিংক্স করাটা তার অভ্যেসে পরিনত হচ্ছে। আয়ান ড্রিংক্স করার সময় হঠাৎ করেই কেউ একজন না করলো দরজায়। আয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে যায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। একি দেখছে সে?



চলবে!!!

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url