হৃদয়ের অনুভূতি - রোমান্টিক প্রেমের গল্প । পর্বঃ ০৫

 

হৃদয়ের অনুভূতি - রোমান্টিক প্রেমের গল্প । পর্বঃ ০৫


হৃদয়ের অনুভুতি

পর্বঃ ০৫


নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। একি দেখছে সে? আয়ান তার সামনে দেখতে পেলো মুশফিয়াকে। মুশফিয়া হলো আয়ানের স্কুল লাইফের বন্ধু। অনেক বছর আয়ানের সাথে মুশফিয়ার কোনো প্রকার যোগাযোগ হয়নি। আয়ান হঠাৎ করে তার ছোট্ট বেলার বন্ধুকে দেখতে পেয়ে একটু অবাকই হলো। আয়ান মুশফিয়ার দিকে তাকি আছে। মুশফিয়া আবারও বলল......


-- স্যার, আসতে পারি?....


মুশফিয়ার কথায় আয়ানের ঘোর কাটল। আয়ান একটু চমকে গিয়ে বলল.....


-- হ্যাঁ, আয় আমার চেম্বারে আসতে তোকে অনুমতি নিতে হবে না।


মুশফিয়া একটু কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। সে ভাবছে একটা অপরিচিত মেয়েকে তুই করে ডাকাটা কোন ধরনের ভদ্রতা?... মু্শফিয়া চেম্বারে প্রবেশ করে আয়ানকে বলল......


-- স্যার, কিছু মনে করবেন না.... আমি কি আপনাকে চিনি?... না মানে আপনি আমাকে তুই করে বললেন তাই জ্বিগাসা করলাম।


-- আমি চিনি মানে?.... মুশফিয়া আমি আয়ান। তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম আমি। স্কুল লাইফের সব থেকে ভালো বন্ধুত্ব আমাদের ছিলো। ভূলে গেছিস আমার কথা?.....


আয়ানের কথা শুনে মুশফিয়ার চোখ জোড়া বড় হয়ে গেলো। তার ঠোঁটের কোণে এক মৃদু হাসি উঁকি দিলো.....


-- আয়ান তুই!..... তোকে তো চেনাই যাচ্ছেনা। অনেক বদলে গেছিস তুই।


-- হ্যাঁ, অনেক বদলে গেছি আমি। আপন মানুষ গুলোই ছেড়ে চলে গেছে। তুই যে আমায় ভূলে যাবি এটাই স্বাভাবিক।


-- কি বলছিস আয়ান?.... আগে তুই ভিশন মোটা ছিলি এখন পুরো জেন্টালম্যান। তাই তোকে চিনতে পারিনি। আর এমনিতেই আয়ান আমি বর্তমানে ভিশন খারাপ সময় পার করছি। তাই একটু ডিপ্রাইজড ছিলাম। সেই জন্য আর কি!?.......


-- হয়েছে এখন বল হঠাৎ অফিসে এলি কি জন্য? আর তোকে এতো অসুস্থ লাগছে কেনো? তুই কি প্রেগন্যান্ট!......


-- হুম, আমি মা হতে চলেছি। আর একটা চাকরি আমার খুব.......


আয়ানের মাথা গরম হয়ে গেলো মুশফিয়ার কথা শুনে। আয়ান চেঁচিয়ে বলল......


-- চুপ কর তুই। মেয়ে মানুষ নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। ভালো কথা। স্বামীর উপর নির্ভর করে না। নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে চায়। মাশাআল্লাহ আরও ভালো কথা। কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝতে পারলাম না এই সময় কেনো তোকে চাকরি খোঁজার জন্য বের হতে হলো?..... তোর ফ্যামেলি পারমিশন দিলো কি করে?... তাছাড়া তোর স্বামীই বা কিছু বললো না কেনো?.....


-- আয়ান ছয় মাস আগে আমার হাজব্যান্ড আমায় ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। বাবা মা মরা গেছে আরও বছর দুয়েক আগে। বাড়িতে খাবার মতো কিছু নেই। বাড়িওয়ালা নোটিশ দিয়েছে বাড়ি খালি করার জন্য। কি করবো আমি? কিচ্ছু মাথায় আসছে না। অনেক জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি। সবাই চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে আমাকে বাজে.........


মুশফিয়াকে থামিয়ে দিলো আয়ান। মুশফিয়ার কথা গুলো শুনে আয়ানের চোখের কোনে নোনা জল চলে আসে। সত্যিই এই সমাজের মানুষ গুলো দিন শেষে কতটা অসহায়। আয়ান চোখ মুছে মুশফিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা নিজের অজান্তেই কাঁন্না করে ফেলল। আয়ান তাকে শান্তনা দেয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। আয়ান একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল........


-- আমি সত্যিই দুঃখিত আসলে.......


-- আয়ান সরি বলতে হবে না। এটা আমার ভাগ্যে ছিলো। আর ভাগ্যের লিখন কেউ বদলাতে পারে না।


-- হুম, আচ্ছা আগে লাঞ্চ করে নেই। তারপর দুইজন মিলে আড্ডা দিবো....


-- লাঞ্চ করবো!?...... আসলে আমার আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে হবে আজ। আচ্ছা আয়ান অন্য কোনো দিন.....


-- উফফফফ মুশফিয়া.... আচ্ছা আমার অফিসে চাকরি করলে কি সমস্যা হয় তোর? না মানে তুই তো চাকরি করতেই চাস। তাহলে এখানে কেনো নয়?


-- তুই আমাকে জব দিবি?....


-- জ্বি ভাই দিবো।


-- কি বলে যে তোকে.....


-- ধন্যবাদ লাগবে না ট্রিট লাগবে আমার।


-- ওকে.......


✒️ আয়ান মুশফিয়াকে নিয়ে ক্যন্টিনে চলে আসে। সত্যি একজন মেয়ের সব রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কিছু নোংরা মানসিকতার মানুষ তাদের সেই যোগ্যতা বিচার না করে অন্য কিছু চায়। এমন ঘটনা বর্তমানে প্রায় ঘটে........

আয়ান মুশফিয়ার সাথে লাঞ্চ করে নেয়। লাঞ্চ করার সময় আয়ান নিজের জীবনের সব গল্প তার সাথে শেয়ার করে। বিশেষ করে নেহার বিষয়ে এমন কোনো কথা নেই যা আয়ান বলেনি মুশফিয়াকে বলেনি। আয়ানের সব কথা শোনার পর মুশফিয়া একটু রেগে যায়। মুশফিয়া আয়ানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল......


-- আয়ান কি বলছিস তুই? নেহাকে পাবার জন্য তুই এতো নিচ একটা কাজ করতে পারলি!?......


-- হ্যাঁ রে কি করতাম আমি? কয়েক কোটি বার বলেছি নেহাকে ও যেনো রিহানকে বলে দেয় আমাদের সম্পর্কের কথা। কিন্তু ও তা করে নাই। ও রিহানকে বিয়ে করার কথা বলেছে। আচ্ছা আমি কি খারাপ? ওকে ভালোবাসি না? অন্য মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট আমি? আমি ওকে ঠকিয়েছি? একদম না আমি শুধু মাত্র ওকে চেয়েছি। বিশ্বাস কর আমায় আমি কখনও ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা চিন্তা করিও করিনি। কিন্তু কি করতাম ও মুখে বলে ভালোবাসে না অথচ ওর চোখ বলে ভালোবাসে। প্রচুর অবহেলা, অপমান আমাকে বাধ্য করেছে এই পদক্ষেপ নিতে। আমি ওকে হারাতে চাই নাই। তাই ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাই। 


-- ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কি লাভ হলো? সে তো তোকে একা করে চলে গেলো....


-- হুম, তবে কেনো জানি আমার বিশ্বাস নেহা আমাকে ছাড়া ভালো নেই। নেহা নিজের জেদের জন্য দূরে সরে আছে ঠিক। তবে ওর মনটা আমার কাছেই বন্দি আছে।


-- পাগল তুই?.... দেখ গিয়ে সে নিজের জীবন নতুন করে সাজিয়ে নিয়েছে।


-- জ্বি না ম্যাম, আমি এটা বিশ্বাস করবো না। আর ও যদি নিজের জীবন সাজিয়ে নিয়ে থাকে। তবুও আমি চাই ও ভালো থাকুক।


-- হুম........


* লাঞ্চ শেষে আয়ান মুশফিয়াকে তার বাড়ি পৌঁছে দিলো। প্রেগন্যান্ট মেয়ে বাসে এই গরমের মধ্যে জার্নি করলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া জীবনে একজনের ক্ষতি করেছি আমি। আর কারো কোনো ক্ষতি না নিজে করবো আর না হতে দিবো। আর তার থেকেও বড় কথা মুশফিয়া আমার বন্ধু। ওর ভালো থাকাটা নিয়ে আমাকে তো ভাবতেই হবে। তাই নয় কি!?......


✒️ নেহা নিজের চেম্বারে বসে কিছু ফাইল চেক করছে। তার কাছে ভিশন বোরিং লাগছে এই বিষয় গুলো। সে ফাইল গুলো বন্ধ করে আনমনে আয়ানের কথা কল্পনা করতে লাগলো। আয়ানের কথা মনে পরতেই নেহার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে ভাবতে লাগলো আচ্ছা আয়ান তাকে না দেখতে পেয়ে কি কোনো পাগলামি করছে? নাকি আয়ান অন্য কোনো মেয়ের সাথে নিজেকে আবার মানিয়ে নিয়েছে? আয়ান কি সত্যিই সত্যিই আমাকে মিস করছে? নাকি আমি বোকার মতো ওর জন্য চিন্তা করছি? আয়ান তো বড্ড জেদি। ও যা চায় তা না পাওয়া পর্যন্ত ও শান্ত হয় না। আয়ান আমাকে চেয়েছে। ও চেয়েছে আমি ওর স্ত্রী হয়ে ওর সাথে সারা জীবন এক সাথে থাকি। কিন্তু এখন তো আমি ওকে না জানিয়ে ওর শহর থেকে চলে এসেছি। আচ্ছা ও কি আমায় খোঁজার চেষ্টা করছে? নাকি নতুন করে নিজে ভালো থাকার জন্য অন্য কারো কাছে হৃদয়ে অনুভুতি প্রকাশ করছে?... সে যা ইচ্ছা করুক। আমি তো ওকে এই জন্যই ছেড়ে এসেছি যাতে করে ও নিজের জীবন অন্য কারোর সাথে সাজাতে পারে। আনমনে ভাবছে নেহা আয়ানের কথা। হঠাৎ করে নেহার চেম্বারে চলে আসে তার বাবা। উনি এসে নেহাকে বললেন........


-- আসতে পারি ম্যাম?.....


-- আরে বাবা তুমি!.... আসো


চোখের জল মুছে নেয় নেহা


-- কি করছিস মা?.....


-- এই তো বাবা কিছু ফাইল চেক করছি। তুমি কখন এসেছো?....


-- এই তো এখনি এলাম। কেমন লাগছে নতুন অফিস?... সব কিছু মনে মতো হয়েছে তো?


-- হ্যাঁ, বাবা সব ঠিক আছে......


* নেহা তার বাবার সাথে আরও অনেক সময় ধরে বিজনেসের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো। আসলে নেহার এই বিষয়ে তেমন কোনো ধারনা নেই। তাই আর কি.....


✒️ রাত ৮টা বেজে গেছে। আয়ানের আজকের মতো অফিসের কাজ শেষ। আয়ান চেয়ারের উপর থেকে নিজের ব্লাক কালারের ব্লেজারটা হাতে ভাঁজ করে নিয়ে বেরিয়ে পরলো অফিস থেকে। আয়ান অফিসের নিচে এসে নিজের গাড়িতে ঢুকতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। আয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে দেখতে পেলো রোজা কল করেছে। আয়ান একটু বিরক্ত হলো রোজার কল পেয়ে। আর এমনিতেই বিরক্তির যথেষ্ট কারন আছে। এই রোজা হলো সেই মেয়ে যে আয়ানের জন্য পাগল ছিলো। কিন্তু আয়ান বার বার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। রোজা যখনি বলতো আয়ান আমি তোকে ভালোবাসি!.. আয়ান তখনই একটা কথা শুধু বলতো। আমার লাইফে নেহা ছাড়া আর কেউ নেই। কিন্তু রোজা তা মানতো না। এতো দিন পর হঠাৎ রোজা কল করলো!.... 


-- হ্যালো.....


-- আয়ান কেমন আছো?...


-- এই তো আছি। হঠাৎ করে কল করলি কি জন্য?


-- আজ আমার জন্মদিন তাই কল করলাম তোকে...


-- ওহহহহ, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ


-- থ্যাংক ইউ বাট শুধু উইস করলে হবে না।


-- তো?....


-- একটা পার্টি থ্রু করেছি আমি আর এই পার্টিতে তোকে আস্তে হবে।


-- ওকে বাট পার্টি কবে?


-- আজ


-- মানে?... আজ পার্টি আর তুই এই কথা আমায় এখন বলছিস।


-- তোকে মেসেজ করে জানিয়েছি আগেই কিন্তু তুই কোনো রিপ্লাই করিসনি।


-- ওহহহ, আস‌লে ডিসটার্ব মাইন্ড ছিলাম এতো দিন....


-- আচ্ছা, আমি ওয়াটস আফ করে দিচ্ছি এড্রেস টা!....


-- ওকে.....


* কলটা কেটে আয়ান গাড়ি স্টার্ট করলো। রওনা দিলো রোজার সেন্ড করা এড্রেস অনুযায়ী। মিনিট দশেক পর আয়ানের গাড়ি পৌঁছে যায় রোজার এড্রেসে। আয়ান গাড়িটা পার্ক করে ক্লাবের ভিতরে চলে আসে। ভিতরে আসতেই আয়ানের চোখে পরলো তার অনেক বন্ধু এখানে এসেছে। আয়ানকে পার্টি হলে দেখতে পেলো রোজা। রোজা আয়ানের পিছন থেকে এসে বলল......


-- কিরে কখন এলি?...


-- এই তো মাত্র এলাম।


-- নেহাকে দেখতে পাচ্ছি না তো!..... ও কোথায়?


-- জানি না.......


-- ঝগড়া হয়েছে তোদের?


-- না অভিমান করে সারা জীবনের জন্য ছেড়ে চলে গেছে।


-- ওহহহহ,


* আয়ান আর কিছু না বলে ওয়েটারের থেকে কয়েক গ্লাস ড্রিংক্স নিয়ে খেতে লাগলো। ব্যাগ্রাউন্ডে লাউড মিউজিক চলছে। সবাই নিজের মতো ইনজয় করলেও আয়ান টেবিলের এক কোনে নিরবে বসে আছে। নেহার কথা মনে করিয়ে দিলো রোজা। এখন ইচ্ছে করলেও স্বাভাবিক থাকা যায় না। আয়ান ড্রিংক এর সাথে সাথে সিগারেট খাচ্ছে। হঠাৎ করে রোজা কোথা থেকে যেনো এসে আয়ানের পাশে এসে বসলো। আয়ানের ঐ দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। আয়ান আনমনে নেহার কথা ভেবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে। হৃদয়টাকে পুরিয়ে ফেলছে নিকোটিনের বিসাক্ত ধোঁয়ায়। রোজা আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল......


-- আয়ান তুই সিগারেট খাচ্ছিস!?... তুই তো কখনও সিগারেট খাওয়া তো দূরে থাক। সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারতিস না। তবে এখন কেনো........


-- সময়ের সাথে সাথে অভ্যেস পরিবর্তন হয়।


-- এতোটা ভালোবাসিস নেহাকে!?....


-- কতটা ভালোবাসি জানি না। তবে ওকে ছাড়া ২য় কাউকে কল্পনা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।


-- ক্ষমা করে দিস আমায়। আজ আমার জন্য নেহা তোর থেকে এতো দূরে চলে গেছে।রাজ আমার জন্য তুই এভাবে কষ্ট পাচ্ছিস। সেদিন যদি আমি নেহাকে তোর নামে মিথ্যা না বলতাম। তবে হয়তো তোকে নেহা কখনও অবহেলা করতো না। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। আমি তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এমনটা করেছি। আয়ান..........


রোজার কথা শুনে আয়ানের ঠোঁট থেকে জ্বলন্ত সিগারেট টা মাটিতে পরে গেলো। একি শুনছে আয়ান? নিজের কানকে আজ বিশ্বাস করা দায় হয়ে পড়েছে। রোজার কথা শুনে আয়ানের নেশা উড়ে যায়। আয়ান একটা ঢোগ গিলে বলে.......


-- মমানে?......


* রোজা আয়ানকে সব সত্যিটা বলে দেয়।  আয়ান সব কিছু শোনার পর নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলো না। আয়ানের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে রোজার কথা শুনে। আয়ান রোজাকে কিছু বলার আগেই আয়ানকে.................




আয়ান রোজাকে কিছু বলার আগেই আয়ানকে অবাক করে দিয়ে পিছন থেকে রাজ এসে আয়ানকে বলল.....


-- আয়ান কোনো সিংক্রিয়েট করিস না প্লিজ....


-- আমি কোনো ঝামেলা করবো না রাজ!?.... এই মেয়েটার জন্য আমি সব হারিয়ে ফেলেছি। আমি নিজের চরিত্রের উপর রেপিস্টের স্টাম্প লাগিয়েছি। নেহার চোখে ধর্ষক হয়েছি। আমার নেসাকে আমি কষ্ট দিয়েছি এই মেয়েটার জন্য। আর আমি ওকে কিচ্ছু বলবো না?....... 


-- আয়ান নেহা ওর কথা বিশ্বাস করেছে কারন তোর থেকেও বেশি বিশ্বাস নেহা রোজাকে করেছে। যদি নেহা তোকে বিশ্বাস করতো তবে তোর কাছে সবটা শেয়ার করতো।


-- নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে অন্যের পরিস্থিতি যাচাই করা যায় না রাজ....


আয়ানের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। একটা মিথ্যা আয়ানের থেকে তার প্রিয়জনকে ছিনিয়ে নিয়েছে। কথাটা ভাবতেই আয়ানের বুকটা দুমরে মুচড়ে উঠলো। রোজা আয়ানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে দুহাত জোর করে বলতে লাগলো.........


-- আয়ান আমি তা করেছি তার ক্ষমা হয় না। তবুও বলছি আমায় ক্ষমা করে দাও তুমি......


* আয়ান নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হনহন করে চলে গেলো পার্টি হল থেকে। 

আয়ান গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে রাজের কথা গুলো কল্পনা করতে লাগলো। সত্যিই তো নেহা আমায় সবটা বলে দিতে পারতো। তবে ও বলেনি। নিরবে সব কিছু সহ্য করেছে ও। আচ্ছা আমি কি এতোই খারাপ যে আমার সাথে সব কথা শেয়ার করা যেতো না। আয়ান  ড্রাইভ করতে থাকলো। বাড়ির সামনে এসে আয়ান গাড়ি পার্ক করে নিজের রুমে চলে এলো। ব্লেজারটা সোফার উপরে ফেলে ব্যল্কনিতে দাঁড়িয়ে ড্রিংক করছে সে। আয়ানের চোখ জোড়া থেকে বেরিয়ে আসছে হৃদয় ভাঙা অশ্রু। আয়ান আকাশ পানে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল......


-- ঠকিয়েছিস নেহা। আমাকে তুই খুব বাজে ভাবে হারিয়ে দিলি। যে অপরাধ আমি করিনি। তুই আমায় সেই অপরাধের শাস্তি দিলি। কি দোষ ছিল আমার? আমায় বলতে পারতিস তো তুই!.... কিছু না বলে দিনের পর দিন আমাকে পাগলের মত অবহেলা করে গেলি। আমাকে মানুষ থেকে একটা পাথরের মূর্তি বানিয়ে দিলি। আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলি। আমার সব অভিযোগে তুই.........


✒️ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর নেহা খাবার টেবিলে বসে আছে। রাতের ডিনার করে একটু বিশ্রাম নিবে সে। আজ দুপুরে পর থেকে নেহার শরীর খুব একটা ভালো না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। নেহা নিজেই খাবার নিয়ে খেতে লাগলো। হঠাৎ করে নেহার প্রচন্ড বমি বমি ভাব হতে লাগলো। নেহা খাবার টেবিল থেকে উঠে দৌড়ে চলে যায় বেসিং এর দিকে। পেট চেপে ধরে বমি করতে লাগলো নেহা। মিস্টার সিয়াম সাহেব বিষয়টা লক্ষ করলেন এবং তার স্ত্রী মানে নেহার মাকে নেহার কাছে পাঠালেন। নেহা এখনও বমি করছে। নেহার চোখ মুখ ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। নেহাকে উদ্দেশ্য করে তার মা বলল......


-- তুই ঠিক আছিস তো নেহা!?.....


-- হ্যাঁ, মা আমি ঠিক আছি। কিন্তু কেনো জনি প্রচুর পরিমাণে উইক লাগছে আমার। 


-- বলিস কি?.... নেহা আমার মনে ভয় হচ্ছে। তুই আবার........


-- থামো মা। তুমি যা ভাবছো তা নাও হতে পারে।


* নেহা ফ্রেশ হয়ে নিলো। নেহা নিজের রুমে ফিরে এসে ভাবতে লাগলো মা এর ভাবনা যদি সত্যিই হয় তা হলে কি হবে?..... এই সমাজ আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলবে!.... বলুক তাতে আমার কি?.... নেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চিন্তা করতে লাগলো আয়ানের কথা। কিছু সময় পর নেহা একটা প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট নিয়ে পরিক্ষা করে নিতে চায় সত্যিই কি সে প্রেগন্যান্ট কি না......


✒️ নেহা প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতেই ভিশন অবাক হয়ে যায়। সত্যি নেহা প্রেগন্যান্ট। নেহার গর্ভে আয়ানের সন্তান। একজন নারীর কাছে এই খবরটা সুখের হলেও নেহার বুঝতে পারছে না যে তার এখন কি করা উচিৎ?.... এই খবর শুনে সে খুশি হবে, নাকি সে কষ্ট পাবে? একজন মেয়ে যার স্বামী নেই। অথচ তার গর্ভে এক শিশু বড় হচ্ছে এটা আমাদের সমাজের জন্য জঘন্য একটা বিষয়। নেহার প্রেগন্যান্সির রিপোর্টা তার পরিবার জানতে পারে। নেহার মা এই খবর শুনে ভিশন রকম রেগে যায়। নেহার মা নেহাকে বলল.........


-- নেহা এই রিপোর্ট কি সত্যিই!.....


-- হ্যাঁ, সত্যিই।


-- তুই কি নিজের মানসম্মানের কথা একটা বার ও চিন্তা করবি না?.... তোর সম্মান না থাকলেও আমাদের যথেষ্ট সম্মান আছে। 


-- কি বলতে চাও তুমি?... সোজাসাপ্টা বলতে পারো।


-- এই অবৈধ বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেল। তার এই সমাজে কোনো মূল্য নেই। তার এই দুনিয়ার আলো দেখার কোনো অধিকার নেই।


কথাটা নেহার কানে আসতেই তার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। একজন মায়ের কাছে এই কথাটা শোনা সত্যি কষ্ট কর। একজন মা কখনও তার সন্তানকে হারাতে চায় না। নেহা চোখের জল মুছে তচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে তার মাকে বলল........


-- নষ্ট করে ফেলবো মা?.... আচ্ছা ওর কি অপরাধ সেটা আমায় বলো?..... অপরাধ করলে আমি করেছি। আয়ান করেছে। কিন্তু এই বাচ্চাটা তো কোনো অপরাধ করেনি। তবে কেনো আমি ওকে পৃথিবীর আলো দেখতে দিবো না? কেনো আমি এই বাচ্চাটাকে নিজ হাতে হত্যা করবো? ঐ সৃষ্টিকর্তা কি আমার এই পাপকে ক্ষমা করবে কখনও?...... না মা আমি এই পাপ করতে পারবো না। আমি এই সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চাই। এই সন্তানের মা হয়ে বাকিটা...........


* নেহাকে থামিয়ে দিলো তার মা। উনি বললেন......


-- কোন পরিচয়ে তুই তোর সন্তানকে বড় করবি? এই সন্তানের বাবার পরিচয় এই সমাজের কাছে প্রকাশ করতে পারবি তুই?.....


-- কেনো পারবো না মা?..... ওর পরিচয় আমার পরিচয়। ও আমার সন্তান। দশ মাস আমি ওকে গর্ভে ধারণ করেছি। প্রসবের যন্ত্রনা আমি সহ্য করেছি। ও আমার সন্তান আর কোনো পরিচয় ওর প্রয়োজন নেই।


-- নেহা বাস্তবতা এতোটা সহজ না.....


-- অতোটা কঠিন ও না মা।


-- আর কি বলবো তোকে? যা ভালো বুঝিস তাই কর তুই.......


-- হ্যাঁ, জীবনটা আমার আর এই জীবনের লড়াইটাও আমার একার......


* নেহার উপর অভিমান করে তার মা চলে গেলো। নেহা চোখের জল মুছে ফেলল। একজন নারী এই সময়ে তার প্রিয়জনকে কাছে চায়। তার মা হয়ে ওঠার খবরটা তার স্বামীকে সবার প্রথমে বলতে চায়। তার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করতে চায় এই বিষয়টা। কিন্তু কিছু অপ্রতাশিত সত্যির কারনে আজ নেহা তা করতে পারছে না। নেহা প্রকাশ করতে পারছে না তার হৃদয়ে জমে থাকা সেই সুন্দরতম অনুভূতি.....। আনমনে নেহা আয়ানের সাথে কাটানো বিশেষ মুহূর্তের কথা গুলো মনে করতে লাগলো। গল্পটা একটু ভিন্ন হতে পারতো। যদি আয়ান তাকে ছেড়ে অন্য কোথাও না যেতো..........


✒️ আয়ান অতিরিক্ত নেশা করে পরে আছে নিজের রুমে। চোখ জোড়া লাল। বার বার নেহার কথা মনে পরছে তার। নেহা কেনো আমায় বুঝতে পারলো না!...... পুরো রাত জুড়ে আয়ানের হৃদয়ে চলতে মাথাকলো এই অসহ্য রক্তক্ষরণ। প্রিয় মানুষের দেয়া আঘাত গুলো সত্যিই সহ্য করার মতো না। আর তা যদি হয় কোনো অপরাধ না করে। তবে সেই আঘাতের সিমা থাকে না।।.............


* ভোরের আলো ফুটেছে। আয়ানের চোখের উপর পরছে সূর্যের প্রথম কিরণ। আলো পরতেই আয়ানের চোখ মুখ কুচিয়ে গেলো। আয়ান নিজের মুখটা আড়াল করে আবারও ঘুমিয়ে পরলো। ঘন্টা খানেক পর আয়ানের ঘুম ভেঙ্গে যায় ফোনের রিংটোনের আওয়াজে । আয়ান ঘুম ঘুম চোখে ফোনের স্ক্রিনে তাকালো। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে। আয়ান ফোনটা পিক করলো না। কারন সব সময় এই সব কল আয়ান এড়িয়ে চলে। ফোনটা বিছানায় ফেলে আয়ান উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে আয়ান আবারও দেখতে পেলো সেই একি নাম্বার থেকে আবারও কল আসছে। আয়ান একটু অবাক হয়ে গেলো। কে হতে পারে?.... নেহা নয় তো!..... নিজের মনের মধ্যে ভাবলো আয়ান। আয়ান কলটা তারাতাড়ি পিক করলো........


-- হ্যালো.......


-- আপনি কি আয়ান চৌধুরী বলছেন?.....


-- জ্বি আমি আয়ান চৌধুরী বলছি।


-- আপনাকে এখনি সিটি হসপিটালে আসুন...


-- কিন্তু কেনো?.....


-- আসলেই বুঝতে পারবেন।


* কলটা কাট হয়ে গেলো। আয়ান ফোনটা রেখে ভাবতে লাগলো হসপিটালে কে এডমিট হলো? আর আমার নাম্বারে কেনো কল আসলো?......


✒️ আয়ান রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো হসপিটালের উদ্দেশ্যে। আয়ানের মনে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আয়ান ভিশন দ্রুত পৌঁছে যায় হসপিটালে। হসপিটালে গিয়ে 

রিশিপসনে আয়ান জ্বিগাসা করলো......


-- এই নাম্বার থেকে সকালে আমাকে কর করা হয়েছে। আপনি কি আমায় বলতে পারেন নাম্বারটা কি এখানকার কিনা?


-- ইয়েস স্যার। আমি দেখছি....


রিশিপসন থেকে জানানো হলো এটা তাদের নাম্বার। আর তারাই আমাকে কল করেছে। গতকাল রাতে একজন পেশেন্ট তাদের এখানে এডমিট হয়েছে আর তার ফোন থেকেই আমার নাম্বারটা তারা পায় আর কল করে। আমাকে ওয়ার্ড বয় দেখিয়ে দিলো পেশেন্টের কেবিনটা। আমি ভিশন কৌতুহল নিয়ে তার পিছন পিছন যাই। কেবিনে ঢুকতেই আমি চমকে গেলাম। আমি দেখতে পেলাম কেবিনে.....................!!!



চলবে!!!

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url