প্রেম তুমি - Prem Tumi । মিষ্টি প্রেমের গল্প - Season-2 - Episode: 07

 

প্রেম তুমি - Prem Tumi । মিষ্টি প্রেমের গল্প - Season-2 - Episode: 07

প্রেম তুমি

ফাবিহা নওশীন

সিজন - ২

পর্বঃ ০৭


"যদি বুঝতাম মানে?"

রুশান ওর পাশে বসে থাকা কলিগের দিকে তাকাল। ওর মুখ থমথমে। কেমন বিব্রতকর পরিবেশ। কলিগের সামনে সিন ক্রিয়েট হোক চায় না। কিন্তু অর্পা তো অবিবেচকের মতো ওর সামনেই প্রশ্ন করছে। কলিগ মেয়েটা বুঝতে পারছে ওদের পার্সোনাল কথা হচ্ছে। এখানে না থাকায় শ্রেয়। তাই উঠে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলল,

"স্যার, আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।"

মেয়েটা কোন রকমে কেটে পড়ল। মেয়েটা যেতেই রুশান ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিল অর্পার দিকে। অর্পা ওর রি দৃষ্টিকে অবজ্ঞা করে বলল, 

"এভাবে না চেয়ে থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।"


রুশান বসা থেকে দাঁড়িয়ে ধাতস্থ হয়ে বলল,

"এ নিয়ে আমরা অন্য সময় কথা বলব। এটা আমার অফিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যার চলে আসবে। সো প্লিজ। সিন ক্রিয়েট করো না। এখানে আমার একটা সম্মান আছে।"


অর্পা টেবিলের উপরে ঠাস করে নিজের ব্যাগটা রেখে বলল, 

"তোমার সম্মানের তন্দুরি। যদি আমার প্রশ্নের জবাব না দেও এমন সিন ক্রিয়েট করব যে সারা জীবন মনে রাখব।"


রুশান বিরক্ত মুখে আবারও বসল। তারপর দু'হাতে পুরো মুখের ঘাম মুছে চোখ তুলে অর্পার দিকে তাকাল। ওর চোখে চোখ রেখে বলল, 

"কী চাও তুমি?"


অর্পা ওর বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে বলল,

"তুমি যে সব সময় ভনিতা করে কথা বলো, ঠিক ভনিতা নয় রহস্য নিয়ে কথা বলো এর কারণ জানতে চাই। তোমার এতসব কথার মানে কী? অনেস্টলি বলবা।"


অর্পা কঠোর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। রুশান নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করছে। নাহ! আর নয়। এইবার মনের চাপা যত কথা, যত রাগ, যত আক্রোশ সব বলবে। 

"তোমার আমার ব্রেক আপ হয়েছে অনেক বছর হয়ে গেছে। এসব থেকে বেরিয়ে দুজনেই জীবনে এগিয়ে গেছি৷ এতদিন পরে এসব নিয়ে কথা না বলাই ব্যাটার ছিল কিন্তু তুমি যখন আজ জবাব চাইছো তাহলে শোন, তুমি আমাকে কখনোই বিশ্বাস করতে না। বিশ্বাসহীন ঠুনকো সম্পর্কে ছিলাম আমরা৷ তুমি সুদূর প্রবাসে থাকার পরেও আমার বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসার কোন কমতি হয়নি৷ তুমি যা বলতে তাই চোখ বুঝে বিশ্বাস করতাম। কখনো তোমাকে যাচাই করতে যাইনি। আর না কারো কথায় তোমাকে জাজ করতে গিয়েছি। সবাই যখন বলত অর্পা উড়াল দিয়েছে ও আর তোর কাছে ফিরবে না তখন কনফিডেন্সের সাথে সবাইকে বলতাম ও আসবে। ও আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না। কিন্তু অন্যদিকে তুমি আমার অজান্তে আমার পেছনে স্পাই লাগিয়ে দিলে। কেন? কারণ আমার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস ছিল না। তোমার ধারণা তোমার আড়ালে আমি অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়াব। আর এইজন্য তুমি আমার পেছনে লোক লাগালে দেন সে যা বলল তাই বিশ্বাস করলে। সে না জানুক তুমি তো জানতে আমি কেমন? কারো সাথে মিশলে, হেসে কথা বললে, ছোটখাটো ফ্লার্ট করলেই সে প্রেমিকা হয়ে যায় না। বন্ধুও হতে পারে। তুমি তো জানতে আমি একটু এমনই ছিলাম। রসিক মানুষ, সবার সাথে মজা করতাম। তখন তো সমস্যা ছিল না। সমস্যা হলো বিদেশে যাবার পর। কেন? কারণ ততদিনে তুমি বদলে গেছো। বিদেশের হাওয়া গায়ে লেগেছে। সেদিন আমাকে কল করে যা নয় তাই বললে। আমার চরিত্র খারাপ, আমি আর কখনো ভালো হব না ব্লা ব্লা। একটা বারের জন্য জিজ্ঞেস করলে না, নিজের সাফাই পেশ করার সুযোগ দিলে না। যখন তোমার এতসব অপবাদের মুখে আমার সামান্য অভিমান হলো, ব্যস! কাচের টুকরোর মতো ভেঙে পড়ল সম্পর্ক। অভিমানে বললাম এত সন্দেহ দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না, এভাবে চলতে পারে না। এর সল্যুশন প্রয়োজন। তুমি বললে তাহলে সেপারেশন ব্যাটার। চলো ব্রেক আপ করি। আমার সাথে তোমার আর থাকতে হবে না। মুক্তি দিলাম তোমায়। কি করব আমিও নিলাম।কাউকে তো জোর করে বেঁধে রাখা যায় না। তারপর জানো মজা করাই ছেড়ে দিলাম। একটা রসিক মানুষ বেরসিক হয়ে পড়ল। জীর্ণ শীর্ণ জীবন ঢের চলতে লাগল। অগোছালো মানুষটা কেমন গোছালো হয়ে উঠল। থ্যাংকস টু ইউ। এত গোছালো, মুডি পার্সোন বানানোর জন্য। এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই।"


রুশান চলে গেলেও অর্পা টু শব্দ করল না। স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। চোখ দিয়ে মুক্ত দানার মতো অশ্রু ঝরছে। মাঝেমধ্যে ফুঁপিয়ে উঠছে। 

"রুশান, আমার মনের কথা তুমি সেদিনও বোঝোনি আজও বুঝলে না। আমিও অভিমানে বলেছিলাম ব্রেক আপ করার কথা কিন্তু তুমি যে এত সহজে মেনে নিবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম তুমি বলবে তুমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ে আমার জীবনে নেই আর থাকবেও না। আমি আর মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করব না। আমরা সব আবার ঠিক করে নেব। কিন্তু তুমি তা করোনি। নীরবে সরে এসেছো জীবন থেকে।"

অর্পা ঠোঁট কামড়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। 


____________


দিশা আর দর্শন আজ সন্ধ্যে বেলায় আয়ানের বাড়িতে আসবে। অর্ষাকে দায়িত্ব দিয়েছে ওর ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করার জন্য। 

"এই অর্ষা, ওরা রাস্তায় আছে। আমার অনেক নার্ভাস লাগছে। তুই দেখ না সব ঠিক আছে কি-না।"


"আয়ান ভাইয়া, আমি তো আপ্যায়নের ব্যাপারটা তেমন বুঝি না। আর ওদের ইম্প্রেশ করে কথাও বলতে পারব না। আমি শুধু তোমার বাসার সবাইকে ম্যানেজ করে ওদের সামনে আনতে পারব। নাস্তার ব্যাপারটা আয়েশা আপু দেখছে আর খালাকে আমি বলেছি যদি আমাকে ভালোবাসে তবে যেন কোন সিন ক্রিয়েট না করে সব স্বাভাবিক ভাবে নেয় আর বিয়েটা যেন হয় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আমাকে কথাও দিয়েছে তাই নো টেনশন।"


"তুই কিন্তু পুরো সময়টা আমার সাথে থাকবি। আমার অনেক নার্ভাস লাগছে। ওর ভাই নাকি বলেছে আমার সাথে কথা বলে, আমার পরিবারের সাথে কথা বলে ভালো লাগলে তবেই ওর বাবা-মার সাথে কথা বলবে। যদি আমাকে পছন্দ না হয়?"


"হবে না কেন? আমার ভাই যেন-তেন ছেলে না-কি? দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। ভালো এডুকেশন, ভালো জব কি নেই? তুমি একদম ভেবো না। তোমাকে দেখে, তোমার সাথে কথা বলে ওর ভাই টাস্কি খেয়ে থাকবে।"


"এক কাজ কর তুই ভালো করে সেজেগুজে নে। তোকে দেখে ইম্প্রেশ হয়ে রাজি হলে হতেও পারে।"

আয়ান ফিঁক করে হেসে দিল। অর্ষা ভ্রু কুঁচকে মুখ বাকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা ড্রেস পরলেও নিজেকে বিন্দু পরিমাণ সাজায়নি। মেহমান আসছে তাই নিজেকে পরিপাটি করা উচিত।


গেইট দিয়ে গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করার পর পুরনো ধাঁচের বাড়িটা দর্শনের চোখে পড়ল। দর্শন ধারণা করছিল ছোট হোক তবে জাঁকজমক, জৌলুসে পূর্ণ একটা বাড়িতে আয়ান থাকে। কিন্তু এ তো বিপরীত। রংচটা, পুরনো কারুকার্য শোভিত বাড়িটায় আয়ান থাকে। ভবিষ্যতে ওর বোন থাকবে। দর্শন সেদিকে আর মন দিল না। হয়তো দাদার আমলের বাড়ি। যত্নের অভাবে এমন বেহাল অবস্থা। দিশা যদি এই বাড়িতে থাকতে পারে তাহলে ওর সমস্যা কি। তাছাড়া কোন ভূতুড়ে কিংবা ধসে পড়া বাড়ি তো নয়। গাড়ি থেকে নামতেই বাগানের দিকে চোখ পড়ল। বাগানে আর বাড়ির বাইরে কয়েকটা লাইট জ্বলছে। সে আলোয় পুরো বাগানটা চোখে পড়ল। এই বাড়ির মানুষ অনেক শৌখিন। ফুল, বাগান পছন্দ করে তা স্পষ্ট। বাগানটা দর্শনের বেশ পছন্দ হলো। দর্শন দিশার দিকে তাকাল। ওর মুখ বলছে ও বেশ খুশি। ওদের গাড়ির শব্দ পেয়ে আয়ান আর শাড়ি পরা একজন এগিয়ে এল ওদের অভ্যর্থনা জানাতে। আয়ান দর্শনের সালাম দিয়ে, কুশল বিনিময় করে ভেতরে নিয়ে গেল। ভেতরে প্রবেশ করতেই দর্শন চমকে উঠল। বাড়ির বাহির দেখে যেমনটা ভেবেছিল ভেতরটা তার উল্টো। ভেতরটা আধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো-গোছানো। প্রতিটি আসবাবপত্র মনকাড়া। এদের রুচি আছে মানতে হবে। দর্শন আর দিশা, আয়ানের বাবা-মাকে সালাম দিয়ে সোফায় বসল। আয়ান বারবার সিড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে অর্ষাকে গালাগাল করছে। বিরবির করে বলছে,

"কত করে বললাম পুরো সময় আমার থাকবি আর প্রথম পর্বেই গায়েব। কি এত সাজগোজ করছে? ওকে দেখতে আসছে নাকি আমাকে? আ'ম কনফিউজ।"


অর্ষাকে ছাড়াই আয়ান ওদের সাথে কথা বলছে। বারবার দিশার দিকে চেয়ে ওর ভাইয়ের মনোভাব বোঝার জন্য চোখ দিয়ে ইশারা করছে। আয়ানের মা আর বোন ওদের আপ্যায়নে ব্যস্ত। আয়ানের বাবা ওদের সঙ্গে এসে বসল। অর্ষার কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করল না। 


অর্ষাকে সিড়ি দিয়ে দ্রুত পায়ে আসতে দেখল ওর খালু। আয়ান তখনও কথা বলায় ব্যস্ত। ওর আর দর্শনের মধ্যে পড়াশোনা, জব, ফিউচার প্ল্যান, দিশার পড়াশোনা, ওকে নিয়ে ফ্যামিলির ড্রিম এসব ব্যাপারে কথা হচ্ছে। অর্ষা দ্রুত ওদের সামনে এল। আয়ান পায়ের শব্দ পেয়ে ডান পাশে ঘুরে অর্ষাকে দেখে বলল,

"এত লেট?"


অর্ষা জিভ কেটে বলল,

"সরি সরি।"


দর্শন সরি শব্দটা শুনে থমকে গেল। ঠিক সরি শব্দ না অতি পরিচিত একটা কন্ঠস্বর শুনে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সেই মানুষটিকে। অর্ষাকে দেখে পুরো শকড হয়ে গেল। অর্ষা ওদের উদ্দেশ্যে সালাম দিতেই চোখ আঁটকে গেল দর্শনের বিস্মিত চেহারার দিকে। দু'জনেই দু'জনকে দেখে বিস্মিত, হতবাক, হতবিহ্বল। এমন ভাবে দেখা কেউ আশা করেনি। দুজনের বুকের ভেতর ডুগডুগি বাজছে। অর্ষা ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে নিল। দর্শনের বোনের নাম দিশা ছিল। আর আয়ানের ভাষ্যমতে ফ্যামিলিতে সবাই ডাক্তার। 

দর্শন নিজেকে সামলে নিল। মনে মনে ভীষণ খুশি। অর্ষার সাথে কথা বলার সুযোগ পেয়েছে। তবে ও আয়ানের কি হয় সেটা জানার জন্যও মনে প্রশ্ন জাগছে। 

আয়ান অর্ষাকে বসতে বললে অর্ষা চুপচাপ বসে পড়ল। ওর মুখ থেকে হাসি মিলিয়ে গেল। দিশার সাথে বিয়ে হোক এটা চায় কিন্তু দর্শন ওর আরো কাছাকাছি চলে আসবে সেজন্য ভয় হচ্ছে। 

"এ হচ্ছে আমার একমাত্র খালাতো বোন অর্ষা। খুব ভালো মেয়ে।"


দিশা আর দর্শন দু'জনেই হ্যালো বলল। তারপর ও দর্শন আর দিশার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। অর্ষা ওদের কথায় শুধু হ্যা, না, হু মিলিয়ে যাচ্ছে আর কোন কথা বলছে না। হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। দর্শন আড়চোখে অর্ষাকে বারবার দেখছে। পুরো সাদা রঙের একটা ড্রেস পরেছে। হালকা সেজেছে। বারবার অর্ষার চোখে চোখ পড়ে যাচ্ছে। 

অর্ষা পরিস্থিতি অন্য রকম করার জন্য আয়ানকে বলল,

"আয়ান ভাইয়া, এভাবে বসে থাকবে। দিশাকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাও। যেখানে থাকবে সেখানটা দেখে নিক। পছন্দ অপছন্দের একটা ব্যাপার আছে।"


আয়ান দিশার দিকে তাকাল আর দিশা ভাইয়ের দিকে। ভাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। অর্ষা আয়ানের কানে ফিসফিস করে বলল ছাদে চলে যাও কেউ ডিস্টার্ব করবে না। আমি গিয়ে কফি দিয়ে আসব। মন খুলে গল্প করো। ওদের পজিটিভ সাইন দেখতে পাচ্ছি। আয়ান দিশাকে বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে নিয়ে গেল। 

অর্ষা কফি বানানোর বাহানায় উঠে গেল। 


অর্ষা ছাদে কফি নিয়ে যেতেই ওদের কথা শুনল।

দিশা বলছে,

"আচ্ছা অর্ষা আপুকে এমন দেখাচ্ছিল কেন? পুরোটা সময় চুপচাপ ছিল। মনটা খারাপ মনে হলো। ও আবার তোমাকে পছন্দ করে না তো?"


"আরে নাহ! ও আমাকে পছন্দ করে না বলেই তো বিয়ের জন্য প্রেসার দিয়েছে। আমরা একে অপরকে ভাই বোনের চোখে দেখি। ও ছোট বেলায় অনেক চঞ্চল ছিল কিন্তু একটা দূর্ঘটনা ওর জীবন থেকে সব খুশি কেটে নিয়েছে। সে ঘটনা অন্যদিন বলব। আর এই কারণেই কেমন চুপচাপ থাকে। সব সময় বিষন্ন মুখে ঘুরে বেড়ায়।"


"আমার ভাইয়ার ক্ষেত্রেও সেম। এখানে যাই একটু কথা বলছে বাড়িতে কারো সাথে তেমন কথা বলে না। ইউএস থেকে ডাক্তারি পাশ করে বেকার বসে আছে। কত ভালো ভালো হসপিটাল থেকে অফার আসছে কিন্তু ও রেসপন্স করছে না। এত ভালো অপশন থাকার পর কেউ এভাবে মুখ করে ঘরে বসে থাকে? ও এমন ছিল না। জানি না কি হয়েছে। শুনেছি কলেজ লাইফে একটা মেয়েকে পছন্দ করত। তারপর ওর জীবনে একটা দূর্ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে ও এমন হয়ে গেছে। এর জন্য অবশ্য বাবা-মা দায়ী ছিল। ভাইয়ার জন্য অনেক চিন্তা হয়। জীবনটা এভাবে নষ্ট করার মানে হয়?"


অর্ষা ওদের কথার মাঝে ঢুকে পড়ল। কফি দিতে দিতে হাসি মুখে বলল, 

"মনে হচ্ছে আয়ান ভাইয়াকে তোমার ভাইয়ার পছন্দ হয়েছে।"


দিশা কফি নিতে নিতে বলল,

"আমারও তাই মনে হচ্ছে। নয়তো এখানে এত সময় দিত না। আর আমাকে আয়ানের সাথে আসতে দিত না। এখন বাবা আর মাকে রাজি করাতে পারলেই হয়।"


"সেটা তোমার ভাইয়া করে ফেলবে। চিন্তা করো না।"


"আমার চেয়ে দেখছি আপনি ভালো চিনেন ভাইয়াকে।"

দিশা আর আয়ান মুখ টিপে হাসল। 

অর্ষা থমথমে মুখে বলল, 

"না, মনে হলো।"


অর্ষা নিচে গিয়ে সবাইকে কফি দিল। দর্শনের জন্য আলাদা করে ব্ল্যাক কফি বানিয়েছে। বিদেশে থাকতে অনেক বার ট্রেনিং নিয়েছে ব্ল্যাক কফি বানানোর। তারপর নিজেও অভস্ত্য হয়ে পড়েছে ব্ল্যাক কফির উপর। 

দর্শনকে ব্ল্যাক কফি দিতে দেখে আয়েশা জিজ্ঞেস করল, 

"উনার জন্য ব্ল্যাক কফি? কেন?"


অর্ষা কি জবাব দেবে বুঝতে পারছে না। কি করে বলবে দর্শনের পছন্দের কথা। দর্শন ওর মুখের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বলল, 

"আমার ব্ল্যাক কফিই পছন্দ। তাই.... 


" কিন্তু ও কি করে জানল?"


দর্শন এর জবাব অর্ষার জন্য রেখে দিল। 

অর্ষা আমতা-আমতা করে বলল, 

"মনে হলো তাই বানালাম।"


এ নিয়ে কেউ আর কথা বাড়ালো না। কফি শেষ করে দর্শন অর্ষাকে উদ্দেশ্য করে বলল, 

"ওয়াশরুম কোন দিকে?"


অর্ষা মনে মনে রাগ করলেও মুখে বলে দিল। দর্শন বুঝতে না পেরে বলল, 

"ঠিক বুঝতে পারলাম না কোন দিকে।"


আয়েশা অর্ষাকে বলল,

"একটু দেখিয়ে দিয়ে আয় না।"


অর্ষা বাধ্য হয়ে দর্শনকে নিয়ে গেল। আয়েশার দর্শনকে বেশ পছন্দ হয়েছে তাই ওর সাথে অর্ষার সেট করতে চাইছে মনে মনে। 


অর্ষা ওকে ওয়াশরুমের কাছে নিতেই দর্শন ওর দু বাহু চেপে ধরল দেয়ালে। অর্ষা ভয় পেয়ে গেল। দর্শন ওর একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। নিশ্বাস বারি খাচ্ছে ওর মুখে। অর্ষা ঢোক গিলল। এমন অনুভূতির সাথে পরিচিত নয় ও। এত বছর পরে সেই পরিচিত মানুষের ছোয়া, তার শরীরের গন্ধ  সারা শরীরে শিহরণ বয়ে দিচ্ছে। দর্শনের চোখের দিকে তাকাল। কেমন মাদকতা।

"ছাড়ো আমায়, আমি জানতাম তোমার মতিগতি ভালো না তাই আসতে চাইনি তোমার সাথে। ছাড়ো আমায় কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।"


"সর্বনাশ হয়ে যাক। নতুন করে সর্বনাশ হওয়ার মতো কিছু বেঁচে নেই।"


অর্ষা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। 

"কী চাও তুমি?"


"যেটা পাওনা আছি। যা পাওয়া বাকি ছিল। সেটাই চাই আমার।"


"তোমার কোন পাওনা নেই আমার কাছে।"


"তোমাকে পাওয়া এখনো বাকি আছে।"


"তোমার কী মনে হয় তোমার জন্য আমি বসে আছি? কেউ আসেনি আমার লাইফে?"


"সমস্যা কী? আসলে আসুক। যেভাবে এসেছে সেভাবে চলে যাবে। আমি তোমার প্রথম বয়ফ্রেন্ড ছিলাম। ছিলাম কি এখনো আছি। কারণ আমাদের ব্রেক আপই হয়নি। তাই বিয়ের জন্য প্রথম প্রায়োরিটি আমার। বাকিরা বাদের খাতায়।"


অর্ষা রাগে ফুসফুস করছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে দর্শন আরো জোরে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বড় করে নিশ্বাস নিয়ে বলল, 

"কতদিন পর তোমার নিশ্বাস ছুতে পারলাম। তোমার ঘ্রাণ নিতে পারলাম। কেমন একটা মাদকতা শরীর ছুয়ে যাচ্ছে।"

দর্শন আচমকা ওর গালে ঠোঁট ছুইয়ে দিল। অর্ষা চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে। দর্শন বাকা হেসে বলল, 

"সরি, কন্ট্রোল করতে পারিনি।"


অর্ষা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিরবির করে গালাগাল করতে করতে চলে গেল। দর্শন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওর পেছনে পেছনে ড্রয়িংরুমে গেল। বারবার ওর দিকে চেয়ে চেয়ে হাসছে। অর্ষার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। 


মাঝরাতে রুশানের মোবাইল বেজে উঠল। ঘুমঘুম চোখে কল রিসিভ করে অর্পার মিষ্টি কন্ঠস্বর শুনতে পেল। ওর কন্ঠ শুনে ঘুম উবে গেল। অর্পা সরাসরি ওকে প্রশ্ন করল, 

"আচ্ছা তোমার কি গার্লফ্রেন্ড আছে? মানে আমার সাথে ব্রেক আপ করার পর কেউ তোমার জীবনে এসেছে?"


"এত রাতে এই প্রশ্ন করার জন্য কল করেছো?"

ঘুম জড়ানো কন্ঠে পালটা প্রশ্ন করল। 


"হ্যা, উত্তর দেও।"


" ব্রেক আপের পর কি প্রেম না করে তোমার অপেক্ষায় বসে থাকব?"


অর্পা জোর গলায় বলল, 

"হ্যা, থাকবে। আমি যদি তোমার অপেক্ষায় বসে থাকতে পারি তবে তুমি কেন পারবে না?"

রুশানের কাছে ওর প্রশ্নটা সাংঘাতিক প্রশ্ন লাগছে। 



চলবে?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url