শীতকালে গর্ভবতী মায়ের যত্ন | গর্ভাবস্থায় শীতে করণীয় ও সতর্কতা
শীতকালে গর্ভবতী মায়ের যত্ন:
শীতকাল গর্ভবতী মায়েদের জন্য একদিকে আরামদায়ক, আবার অন্যদিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জিং সময়ও বটে । ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ঠান্ডা-কাশি বা ফ্লু’র ঝুঁকি বেড়ে যায় । তাই এই সময় মায়ের একটু বাড়তি যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি ।
১. গরম ও আরামদায়ক পোশাক পরুন
-
গর্ভবতী মায়েরা যেন কখনও ঠান্ডা না লাগে।
-
ঢিলেঢালা, তুলা বা উলের আরামদায়ক জামা পরুন যা শরীর গরম রাখবে কিন্তু ঘাম জমাবে না।
-
বাইরে গেলে অবশ্যই টুপি, মোজা ও হাতমোজা ব্যবহার করুন।
-
রাতে ঘুমানোর সময় হালকা কম্বল ব্যবহার করুন যাতে শরীর গরম থাকে।
২. পুষ্টিকর খাবার খান
শীতের সময় সঠিক খাবার গর্ভবতী মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শিশুর বিকাশে সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় রাখুন:
-
গরম দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস (প্রোটিনের উৎস)
-
শীতের সবজি যেমন গাজর, পালং শাক, লালশাক
-
ফলমূল যেমন কমলা, আপেল, পেয়ারা (ভিটামিন সি)
-
হালকা গরম পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করুন
-
অতিরিক্ত ঠান্ডা বা ফ্রিজের খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. সূর্যের আলো নিন
শীতকালে সূর্যের আলো কম পাওয়া যায়, ফলে শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি হতে পারে।
-
প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট সূর্যের আলোতে বসুন।
-
এটি শরীর গরম রাখে ও শিশুর হাড়ের গঠনেও সাহায্য করে।
৪. ত্বকের যত্ন নিন
শীতকালে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়, যা অস্বস্তিকর হতে পারে।
-
প্রতিদিন হালকা ময়েশ্চারাইজার বা নারকেল তেল ব্যবহার করুন।
-
পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ শরীরের আর্দ্রতা ঠিক রাখা জরুরি।
-
গরম পানি দিয়ে স্নান করবেন না — হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।
৫. ঠান্ডা ও ফ্লু থেকে সতর্ক থাকুন
গর্ভবতী অবস্থায় ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, তাই ঠান্ডা-কাশি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
-
ঠান্ডা পরিবেশে বেশি সময় থাকবেন না।
-
কেউ হাঁচি-কাশি দিলে দূরে থাকুন।
-
ঘরের জানালা খুলে মাঝে মাঝে বাতাস চলাচল হতে দিন।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
শীতকালে ঘুম ভালো হলেও অনেক সময় ঘুমের ভঙ্গি ঠিক না থাকলে অস্বস্তি হয়।
-
বাঁ পাশে কাত হয়ে ঘুমানো সবচেয়ে নিরাপদ।
-
রাতে গরম পানিতে পা ভিজিয়ে নিলে আরাম পাওয়া যায়।
-
সারাদিনে হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করুন, তবে ঠান্ডা জায়গা এড়িয়ে চলুন।
৭. মানসিক প্রশান্তি ও ব্যায়াম
-
হালকা যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন মানসিক প্রশান্তি দেয়।
-
শরীরচর্চা রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখে ও ঠান্ডা লাগা কমায়।
-
অতিরিক্ত ক্লান্তি বা স্ট্রেস থেকে দূরে থাকুন।
৮. নিয়মিত ডাক্তার দেখান
শীতের সময় অনেকেই অলস হয়ে পড়ে যান, কিন্তু এই সময় নিয়মিত প্রেগন্যান্সি চেকআপ করা খুব জরুরি।
-
রক্তচাপ, ওজন ও শিশুর বিকাশ নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
-
ঠান্ডা বা কাশি হলে ওষুধ না খেয়ে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
শীতকালে গর্ভবতী মায়ের যত্ন মানে কেবল গরম কাপড় বা ভালো খাবার নয় — এটি একটি সম্পূর্ণ জীবনযাপন পদ্ধতি। একটু সচেতনতা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও নিয়মিত ডাক্তার পরামর্শেই এই সময়টা কাটতে পারে অনেক সুন্দরভাবে। মা সুস্থ থাকলে, শিশুও থাকবে নিশ্চিন্তে ।
মনের রঙের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url