গর্ভাবস্থায় পা ফোলা কি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক | গর্ভাবস্থায় পা ফুলে গেলে করণীয় কি?

গর্ভাবস্থায় পা ফোলা কি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক | গর্ভাবস্থায় পা ফুলে গেলে করণীয় কি?


আসসালামু আলাইকুম।
আশা করছি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। গর্ভাবস্থায় পা ও গোড়ালি ফোলা অনেকেরই সাধারণ সমস্যা হলেও এর পিছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন—

✔ পা ফোলার স্বাভাবিক কারণ
✔ কোন লক্ষণগুলো বিপদের ইঙ্গিত
✔ ডেলিভারির পর পানি কমে যাওয়ার কারণ
✔ পা ফুললে ঘরে বসে করণীয়
✔ কি খাবেন, কি খাবেন না
✔ ব্যায়াম করবেন কি না

চলুন শুরু করা যাক ।


পা ফোলাটা আসলে কত ধরনের?

গর্ভাবস্থায় পা ফোলা দুই ধরনের হতে পারে—

১. ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক পা ফোলা

গর্ভে শিশুর বৃদ্ধি ও জরায়ুর আকার বাড়ার কারণে শরীরের প্রধান শিরাগুলোর ওপর চাপ পড়ে। যেমন—

  • Inferior Vena Cava

  • পেলভিক ভেইনসমূহ

এতে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং শিরা থেকে ফ্লুইড বের হয়ে পা ও গোড়ালির টিস্যুতে জমতে থাকে। একেই বলা হয় Fluid Retention
এটি পুরোপুরি স্বাভাবিক।

২. প্যাথোলজিক্যাল বা রোগজনিত পা ফোলা

যখন পা ফোলার সঙ্গে কিছু বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা যায়, তখন এটি রোগের ইঙ্গিত দেয়। এ ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি।


ডেলিভারির পরে পানি কমে যায় কেন?

ডেলিভারির পর জরায়ুর আকার কমে যায়। ফলে শিরায় থাকা চাপও কমে।
এরপর রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হলে টিস্যুতে জমে থাকা ফ্লুইড আবার শরীরে ফিরে যায় এবং পা ও গোড়ালির ফোলা কমে যায় 


⚠ বিপদ লক্ষণ (Danger Signs)

পা ফোলার সঙ্গে নিচের যে কোন উপসর্গ দেখা দিলে এটি আর স্বাভাবিক নয়:

১. হঠাৎ প্রেসার বেড়ে যাওয়া

একই সঙ্গে পা ফোলা + প্রেশার বেশি থাকা →
Pre-eclampsia বা Eclampsia এর পূর্ব লক্ষণ।

২. চোখে ঝাপসা দেখা

৩. বুক ও পেটের মাঝামাঝি অংশে ব্যথা

৪. হঠাৎ করে পা ফোলা শুরু হওয়া

৫. এক পা বেশি ফুলে যাওয়া / এক হাত ফুলে যাওয়া

৬. চোখ–মুখে অতিরিক্ত পানি জমা

৭. পায়ে তীব্র ব্যথা (বিশেষ করে কাফ–মাসল)

Deep Vein Thrombosis (DVT) হতে পারে।

উপরে উল্লেখিত যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।


ওষুধ খাওয়া যাবে কি?

স্বাভাবিক পা ফোলার জন্য কোনো ওষুধ প্রয়োজন নেই।

এটি গর্ভাবস্থার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

রোগজনিত পা ফোলা হলে নিজে ওষুধ খাবেন না।

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বিপদজনক।


ঘরে বসে পা ফোলা কমানোর উপায় (Home Remedies)

১. দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলুন

থাকতে হলে প্রতি ৫–১০ মিনিট পর একটু বসুন।

২. পায়ের নিচে উঁচু করে বালিশ দিন

ঘুম বা বিশ্রামের সময় পা হৃদপিণ্ডের সমান বা একটু উঁচুতে রাখুন।

৩. আরামদায়ক নরম জুতা ব্যবহার করুন

৪. বাম কাত হয়ে শোয়া (Left Lateral Position)

এতে Inferior Vena Cava-র চাপ কমে, রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।

৫. পানির পরিমাণ কমাবেন না

প্রতিদিন ১০–১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে।


কি খাবেন ও কি খাবেন না?

এড়িয়ে চলবেন—

  • অতিরিক্ত লবণ

  • উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার

    • নোনতা বিস্কিট

    • চিপস

    • প্যাকেটজাত খাবার

খাবেন—

পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:

  • কলা

  • মিষ্টি আলু

  • ডাবের পানি

  • শাক–সবজি
    এগুলো ফ্লুইড ব্যালান্স নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


ব্যায়াম করা যাবে কি?

✔ করা যাবে, বরং করা উচিত।

হালকা ব্যায়ামগুলো খুবই উপকারী—

  • হালকা হাঁটা

  • হালকা যোগ ব্যায়াম

  • Breathing exercise

  • পায়ে হালকা ম্যাসাজ

  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ স্ট্রেচিং

❌ যা করা যাবে না

  • ভারী ব্যায়াম

  • দ্রুত সাইকেল চালানো

  • প্রেশার বাড়ানোর মতো কষ্টকর ব্যায়াম


শেষ কথা

অনেকেই বলেন—
“দাদী–নানীরও পা ফুলতো, ডেলিভারির পরে ঠিক হয়ে যেত। তাই চিন্তা করার কিছু নেই।”

কিন্তু এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির কারণে আমরা জানি—
সব পা ফোলা স্বাভাবিক নয়।
তাই বিপদ লক্ষণগুলো মাথায় রাখুন এবং সন্দেহ হলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।

যেকোন প্রশ্ন কমেন্টে করতে পারেন এবং Moner Rong চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।

আল্লাহ হাফেজ ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মনের রঙের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url